‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে হবে’
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ২১:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আইনের আওতায় আনতে বলেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অপরাধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে আগের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায়। যেহেতু তাদের এখনো পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি, এজন্য তারা এসব করার সুযোগ পেয়েছে। এখনই সময় এসেছে যারা নিষিদ্ধ সংগঠনের (ছাত্রলীগ) সদস্য ছিলেন তাদের আইনের আওতায় আনা। তাদের এ মুহূর্তে বাইরে রাখলে, আমাদের আশঙ্কা, সমাজের আশঙ্কা যে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাবে।’
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যে সাজা হওয়া দরকার সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় হোক বা আলিফের হত্যাকাণ্ডের উস্কানিদাতা হোক, অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। গত দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, ধারাবাহিকভাবে কেউ যদি কোনো সংগঠনের পরিচয়ে অপব্যবহার করে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। সে ব্যক্তি দোষী হবেন, কোনো সংগঠন নয়। ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয় আসবে না। তখন শুধু সেই ব্যক্তিই অপরাধী।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকলে তাহলে সে ব্যক্তিটিই দায়ী হবে। তার ব্যক্তি পরিচয়, সামাজিক পরিচয়, ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় কোন কিছুই সামনে আসবে না। ওঠে আসবে শুধু এ ব্যক্তি সন্ত্রাসী। তাই কাউকে কোন সংগঠনের বলাটা আমরা পরিহার করি। একক অপরাধের জন্য কোনো সংগঠন, দল বা কোন গোষ্ঠীকে আঙ্গুল তোলা উচিত নয়। পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেটা আজীবন ছিল, আগামীতেও থাকবে। সেটা বজায় রাখি এবং সকলে মিলে আমরা একটি সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ি।’
এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল তারা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে তাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের হত্যা করা হবে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের হামলা কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের কারণে কোন আওয়ামী লীগ নেতা তো নয়, কোন সনাতনী সম্প্রদায়ের নয়, চট্টগ্রাম কোনো নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি।’
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে মধ্যযুগীয় কায়দায় খুন করা হয়েছে মন্তব্য করে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আলিফকে অত্যন্ত বর্বরতার সাথে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রফেশনালি মারা হয়েছে। তাই এটা পেশাদার খুনি ছাড়া এ রকম কেউ করতে পারে না। আমি মনে করি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক নাম নিয়ে সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, তার কোন দল, ধর্ম, বর্ণ নেই। সে সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত হবে। আর তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। সে যেই হবে যেখান থেকে হবে উঠিয়ে এনে চট্টগ্রামবাসী তার বিচার করবে। কোনো রেহাই সে পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মের নাম নিয়ে যেসব সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারা এখনো মিছিল করে বেড়াচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা হবে। যারা ছাত্র-জনতা-শ্রমিককে খুন করেছে। অবৈধ ব্যক্তির কাছে বৈধ অস্ত্র এবং বৈধ ব্যক্তির কাছে অবৈধ অস্ত্র; যতক্ষণ পর্যন্ত এসব উদ্ধার করা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা মাথা ছাড়া দিবে এবং এসব কাজ করবে।’
মেয়র বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা চিহ্নিত, তারা সন্ত্রাসী। তাই নিরীহ, নির্দোষ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর যাতে কোনো ধরনের অনাচার অত্যাচার না হয়। আমরা সবাই চট্টগ্রামের সন্তান। এই চট্টগ্রামেই বাস করতে হবে।’
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্মমভাবে আমাদের ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে আমরা আর ফিরে পাবো না। কিন্তু এ ঘটনায়যাতে আর কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। এটা আমাদের সবাইকে রোধ করতে হবে। সবাইকে মিলে সম্প্রীতির শহর, শান্তির শহর, সৌহার্দ্যের শহর উপহার দিতে হবে। বারবার চট্টগ্রামের মানুষ সেটা দেখিয়েছে। এবারও চট্টগ্রামের মানুষ সেটা প্রমাণ করবে।’
এসময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ও রাসেল আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/এইচআই