৭৪ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা
১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৩০ | আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪২
বাগেরহাট: বিদেশি জাহাজ চলাচলে সুবিধাসহ আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে ৭৪ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা।
রোববার (১ ডিসেম্বর ) ৭৫ বছরে পা রেখেছে আন্তর্জাতিক এ বন্দরটি। এ উপলক্ষে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দরের সদর দফতর হতে বন্দরের জেটির মূল ফটক পর্যন্ত র্যালি ও বেলুন উড়িযে দিবসের শুভ উদযাপন শুরু করা হয়। এর আগে ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রাত ১২ টা ১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশী, বিদেশী সকল জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইসেল বাজানো হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর এ বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি এ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামকরণ করা হয়।
এদিন বন্দরের সেরা কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বন্দরের সকল বিভাগ হতে ৩২ জন কর্মরত কর্মচারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কিবরিয়া হক, সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন, সদস্য ( প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আনিসুর রহমান, পরিচালক (বোর্ড) কালাচাঁদ সিংহ, সহকারী পরিচালক ( বোর্ড ও জনসংযোগ ) মো. মাকরুজ্জামান, সদস্য (পরিচালক প্রশাসন) মো. নুরুজ্জামানসহ বন্দরের বিভাগীয় প্রধান ও বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, এই বন্দর চ্যানেলে বিদেশি জাহাজ চলাচলে সুবিধার জন্য ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করা হয়েছে। জেটি, মুরিং বয়া এবং এ্যাংকোরেজ-এ একই সাথে ৪৭ টি জাহাজ নোঙ্গরের সুবিধা রয়েছে এ বন্দরে। এছাড়াও আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য ট্রানজিট শেড, ওয়্যার হাউজ, কন্টেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ১৬১ টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬ টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২ টি সহায়ক জলযানের সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া মোংলা বন্দরে বর্তমানে ৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর সুবিধা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে আগত সমুদ্রগামী জাহাজের বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল দূষণ থেকে বন্দর চ্যানেল এবং সুন্দরবন রক্ষা পাবে। মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ, নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আপগ্রেডেশন অফ মোংলা পোর্ট প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১ দশমিক ৫০ কোটি টন কার্গো, চার লক্ষ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এতে করে বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও জানান, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে মোংলা বন্দরের কার্যক্ষমতা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ , কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কন্টেইনার ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ৪ মাসে ২৯ লাখ মে. টন পন্য আমদানি-রফতারিন হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ৫ টি জেটিতে একই সাথে ৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল আর ভুটানের ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ আর রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে দ্রুততর ও সহজ করবে বলেও জানান তিনি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটরগাড়ী, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, ক্লে টাইলস, রেশমী কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
সারাবাংলা/এসআর/আরএস