সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান বাসদের
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২৩ | আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৩
ঢাকা: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ আগরতলা ও মুম্বাই বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা-ভাংচুর ও জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন। এছাড়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির যে কোনো অপতৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘যে কোনো দেশে-বিদেশি দূতাবাসের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সে দেশের রাষ্ট্র ও সরকারের। অথচ ভারত সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। উপরন্তু ভারত সরকারের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি, বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উসকানীমূলক বক্তব্য এ ধরনের অনভিপ্রেত কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে। যা কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার বর্জিত।’
তিনি বলেন, ‘এ সমস্ত ঘটনায় দুই দেশের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে পুষ্টি যোগালেও দুই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নিরীহ জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদে ফেলছে।’
বিবৃতিতে বাসদ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণের মধ্যে কোনো ভুল প্রবণতা তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্র এবং সরকারের। কিন্তু সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের যে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য এবং ভূমিকা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভক্তি এবং বিরোধকে বাড়িয়ে তোলে।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও পলায়নের পর থেকে ভারতের এক শ্রেণির উগ্রবাদী মহল পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্ধেষ ছড়াচ্ছে। সৎ প্রতিবেশি সুলভ আচরণের বদলে ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার বিষয়ে প্রকৃত তথ্যের বদলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানীমূলক প্রচার চালিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে, যা অনভিপ্রেত।’
বিবৃতিতে কমরেড ফিরোজ বলেন, ‘গত কয়েকদিনে ভারত সরকারের বক্তব্য এবং ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আক্রমণ, বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে। ভারত সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। অতীতেও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব ভারত-বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের জনগণ উপলব্ধি করেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা উপমহাদেশকে অশান্তির আগুনে পোড়াবে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস ও তিক্ততা দুই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নিপীড়িত জনগণের জীবনকেই বিপন্ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমমর্যাদার। প্রভুত্বমূলক আচরণ কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।’
বিবৃতিতে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও যে পরিকল্পিত অসন্তোষ ও অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে তার প্রভাব সমাজের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধ্বংস করবে। যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধে সরকারের জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশের প্রধান সমস্যা শোষণ ও বৈষম্য। এর প্রভাবে শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-নারী সকলের জীবন বিপর্যস্ত। ফ্যাসিবাদী শাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সংগ্রাম করছে তখন সাম্প্রদায়িক সংঘাত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিপন্ন করবে এবং দেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে কিছু উগ্রধর্মান্ধ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ধর্মীয় বিভাজনমূলক বক্তব্য, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনা নিন্দনীয়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জরুরিভাবে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং নাম সেই দেশের জনগণের গভীর আবেগ ও মর্যাদার বিষয়। এর অবমাননা গর্হিত কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু গত কয়েকদিনে এইসব নিন্দনীয় ঘটনা ঘটে চলেছে।’ তিনি এইসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘুদের আতংকিত ও অসম্মানিত করে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সরকার এটা কোনোভাবেই বরদাশত করতে পারে না।’
অবিলম্বে এই ঘৃণ্য তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সকল বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামি জনগণকে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানীর ফাঁদে পা না দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা ও সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই