প্রাদুর্ভাব বেশি ডেন-২’র, রোগ শনাক্ত হচ্ছে না দুই-তৃতীয়াংশ নমুনায়: গবেষণা
৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:১৫
ঢাকা: দেশে ২০০ ডেঙ্গু উপসর্গযুক্ত রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ১২৪ জনের মাঝে সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মাঝে ৯৬টি ধরনেই ছিল ডেঙ্গুর ডেন-২ সেরোটাইপের উপস্থিতি। অর্থাৎ শনাক্তের প্রায় ৭৭ শতাংশ নমুনায় ডেন২ সেরোটাইপের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য প্রচলিত এনএসওয়ান-আইসিটি পদ্ধতির পরীক্ষায় দেখা যায়, সংক্রমণ ধরা পড়েছে মাত্র ৩৫টি নমুনায়। অর্থাৎ ডেন-২ সেরোটাইপ আক্রান্তদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রাথমিক নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ ছিল। অথচ একই সময়ে সংগ্রহ করে অন্য দুইটি পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওইগুলোও ডেঙ্গু পজিটিভ যেখানে ডেন-২ ধরনের উপস্থিতি আছে।
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের (নিলমারসি) ভাইরোলজি বিভাগের করা এক গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।
গবেষকরা বলছেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জমা দেওয়া দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় গবেষণার জন্য। এই নমুনাগুলো জ্বরের প্রথম এক থেকে পাঁচ দিনের মাঝেই সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস অর্থাৎ সাত মাস সময় এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
গবেষণার তথ্য বলছে, ডেন-২ ছাড়াও গবেষকরা ৩০টি নমুনায় ডেন-৩ সেরোটাইপ বা ধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়া দুইটি নমুনায় ডেন২ ও ডেন৩ ধরনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আরিফা আকরাম এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন। এই গবেষণায় সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইরোলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানিয়া ইসলাম রেশমা ও প্রতিষ্ঠানটির ভাইরোলজি বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. তাসনিম নাফিসা।
প্রসঙ্গত, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য এনএসওয়ান-আইসিটি পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে। ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রথম দুই থেকে পাঁচদিনের মাঝে নমুনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এমনই ২০০ নমুনা তিনটি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয় একটি গবেষণার জন্য। সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য পরিচিত এনএসওয়ান-আইসিটি পদ্ধতিতে পরীক্ষার পাশাপাশি আরটি-পিসিআর ও এনএসওয়ান-এলাইজা পদ্ধতিতে এই নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এতে দেখা যায়, আরটি-পিসিআর ও এনএসওয়ান-এলাইজা পদ্ধতিতে ১২৪ জনের ডেঙ্গু সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এর মাঝে ৯৬ জনের নমুনাতেই ছিল ডেন-২ ধরণের উপস্থিতি। তবে ডেঙ্গু নিশ্চিত হওয়া এই সব নমুনা এনএসওয়ান-আইসিটি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে ৬১টি তে ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্ত হয় নাই।
গবেষণা বিষয়ে জানিয়ে ডা. আরিফা আকরাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৯৬টি নমুনায় ডেন-২ ধরণ বা সেরোটাইপ শনাক্ত করি আরটি-পিসিআর ও এনএসওয়ান-এলাইজা পদ্ধতিতে। কিন্তু এনএসওয়ান-আইসিটি পদ্ধতির পরীক্ষায় এই নমুনাগুলোর মাত্র ৩৫টি ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্ত হয়। অর্থাৎ বাকি ৬১টি নমুনা ডেঙ্গু নেগেটিভ ছিল।’
তিনি বলেন, ‘নানা কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। যদি কোনো সেরোটাইপে মিউটেশন বা ভাইরাসের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন থাকবে তবে সেটার কারণেও কিন্তু এমনটা হতে পারে। এছাড়াও, কিটের সেনসিভিটি, স্পেসিফিটির মানসহ বিভিন্ন কারণে এই পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরটি-পিসিআর ও এনএসওয়ান-এলাইজা পদ্ধতির নমুনা পরীক্ষায় এনএসওয়ান-আইসিটি পদ্ধতির চাইতে বেশি ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আর তাই আসলে কেনো ৯৬টার মাঝে ৬১টা নমুনায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয় নাই সেটা আরও গবেষণা করলে জানা যেতে পারে।’
ডা. আরিফা বলেন, ‘গত বছরের নমুনায় আমরা কিন্তু অনেক ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট দেখেছি। আমাদের গবেষণায়ও এটা উঠে এসেছে। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নমুনা পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ মানে রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত না—বিষয়টা কিন্তু তেমনও না।’
আর তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এনএসওয়ান-এলাইজা বা পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করানো হলে রোগ শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে— যোগ করেন ডা. আরিফা আকরাম।
সারাবাংলা/এসবি/এইচআই