উত্তরে বাড়ছে শীত, কুয়াশার দাপটে কমছে সূর্যের প্রখরতা
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৩৩
রংপুর: হিমালয়ের কোল ঘেঁষা উত্তরের জনপদ রংপুর। দেশের অন্য কোথাও শীত খুব একটা অনুভূত না হলেও উত্তরে এর তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বইছে কনকনে বাতাস। যা শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। তাপমাত্রা দিন দিন কমছে, সেইসঙ্গে কমছে সূর্যের প্রখরতাও। এতে জনজীবনে বাড়ছে দুর্ভোগ। সন্ধ্যার পর গা শিহরে ওঠা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। রাত যত গভীর হচ্ছে, ততই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে প্রকৃতি, ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনাও। শীতের কারণে অসুস্থ রোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে।
হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলো। তাই এই জেলাগুলোতে যেমন শীত আসে একটু আগেভাগেই; তেমনি তীব্রতাও পৌঁছে চরম পর্যায়ে। গেল বারের মতো এবারও শীত যেন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে শ্রমজীবী মানুষদের মাঝে। কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের গরিব-অসহায় মানুষ। তীব্র শীত উপেক্ষা করে অনেকেই বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোসাফিজার রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর রংপুর জেলায় ছিলে ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে যেতে পারে। সেইসঙ্গে ঘন কুয়াশার প্রকোপ বাড়তে পারে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। ফলে উড়োজাহাজ, নৌ পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে সমস্যা হতে পারে।’
রংপুর শহরতলীর মডার্ণ মোড়ের রিকশাচালক আশরাফুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে রংপুরে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দু’দিন ধরে বেলা ৯টা থেকে ১০টার আগে সূর্যের দেখা মেলানি। ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। রাস্তা-ঘাট একেবারে ফাঁকা, মানুষজন নেই।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন পর থেকে আরও কনকনে শীত পড়বে। ফলে ঘর থেকে বের হতে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরকম হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিপদে পড়ব।’
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দুটি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে অবতরণ করতে পারেনি। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এ কে এম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৮টায় বেসরকারি বিমান সংস্থার দুটি ফ্লাইট সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের কথা থাকলেও নামতে পারেনি। রানওয়েতে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য কমপক্ষে দুই হাজার মিটার ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) থাকতে হয়। বর্তমানে ১২০০ মিটার দৃষ্টিসীমা বিরাজ করছে। আকাশ পরিষ্কার হলে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। শীতের এ সময় বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রায় এমনটি ঘটে।’
অপরদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারও রংপুরের তারাগঞ্জে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ অন্তত ১০ জন আহতের সংবাদ জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাকার পুল এলাকায় পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে দিনাজপুর গ্রামে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এ সময় রংপুরগামী একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকচালকসহ ১০ জন আহত হয়।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় বিগোয়ান্তক ঘটনা ঘটে অহরহ।
এদিকে, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই জেলায়ও ভাইরাসজনিত জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত তিন দিনে আড়াই শতাধিক মানুষ ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের আউটডোরে আক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার শীতের প্রকোপ নভেম্বর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। শীতের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। বয়স্ক নারী-পুরুষরাও শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
শিশুদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরানো এবং সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
সারাবাংলা/পিটিএম