সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে মিশেল বার্নিয়ের পদত্যাগের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর পদত্যাগের দাবিও উঠেছিল। তবে সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। বলেন, মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ কথা বলেম ম্যাক্রো। এ সময় তিনি জানান, শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মিশেল বার্নিয়ে। এ নিয়ে ফের নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়েছে ফ্রান্স। এবার নতুন করে দাবি ওঠে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোই যেন পদত্যাগ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ম্যাক্রো। সুস্পষ্ট ভাষায় তিনি পদত্যাগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। ম্যাক্রো বলেন, জনগণ আমাকে পাঁচ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের ম্যান্ডেট দিয়েছে। তাই সেই মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি প্রেসিডেন্ট পদে থাকব।
আরও পড়ুন- অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী
ইমানুয়েল ম্যাক্রো বর্তমানে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০২২ সালে ফের তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে ফ্রান্সের জনগণ। দ্বিতীয় এই মেয়াদের মাঝামাঝি রয়েছেন তিনি। ২০২৭ সালের মে মাসে শেষ হবে এই মেয়াদ।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে পদত্যাগ প্রসঙ্গেও প্রথম মুখ খোলেন ম্যাক্রো। বলেন, ফরাসি সংবিধান অনুযায়ী কিছুদিন আগেই সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় শিগগিরই নতুন নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না। তার জন্য অন্তত জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া দেশ পরিচালনাও সম্ভব না।
ম্যাক্রো বলেন, ইউরোপ ও সারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও তাই এমন একটি সরকার দরকার, যারা সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমাদের বিভক্তির পথে হাঁটলেও চলবে না, স্থবির থাকাও চলবে না। তাই কয়েকদিনের মধ্যেই আমি একজন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করব।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র তিন মাসের মাথায় বুধবার (৪ ডিসেম্বর) অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন মিশেল বার্নিয়ে। দেশটির সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট নিয়ে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বার্নিয়ের পদত্যাগের পেছনে কট্টর ডান ও বামপন্থি বিরোধী শিবিরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ম্যাক্রা। তিনি বলেন, তারা কিছু করার নয়, না করাকেই বেছে নিয়েছে। শৃঙ্খলা আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে তারা বিশৃঙ্খলা বেছে নিয়েছে। জনবিরোধী জোটে একত্রিত হয়েছে কট্টর ডান আর কট্টর বামেরা।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক অচলাবস্থা অবশ্য নতুন নয়। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে বেগ পেতে হয়। সম্প্রতি দেশটির আগামী জাতীয় বাজেট পাস করানো নিয়ে ফের বিতর্ক ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান তুঙ্গে ওঠে। একপর্যায়ে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা বার্নিয়ের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন।