১০ ডিসেম্বর ১৯৭১— পালানোর সময় ধরা পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী
১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১০ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:২৪
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। মিত্র বাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটি জাহাজ ভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এদিকে যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করে। তার এ গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। নিয়াজি নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভভরে বলেন, ‘কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা? আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনো আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।’
এ দিন দেশের বেশিরভাগ জেলা শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। ঢাকায় চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসে যৌথবাহিনী। ঢাকায় চলে কারফিউ আর ব্ল্যাক আউট। মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় রেডিও ঢাকা কেন্দ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। বোমা-রকেট ছুড়ে বিধ্বস্ত করে দেওয়া হয় ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর।
এ দিন হেলিকপ্টার ও স্টিমারে মেঘনা নদী পেরিয়ে যায় মিত্র বাহিনী। ভৈরব বাজারের ঘাঁটি থেকে সেনারা সোজা ঢাকার দিকে এগিয়ে আসে। সম্মিলিত বাহিনীর গোলার মুখে পাক হানাদার বাহিনী মেঘনার তীরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রগতি রোধ করতে পারেনি। বাইরে থেকে পাকিস্তানি হানাদাররা যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সেজন্য নদীপথে তাদের যতগুলো স্টিমার-গানবোট এগোনোর চেষ্টা করে, মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় সেসবের সলিল সমাধি হয়।
ময়মনসিংহের দামাল ছেলেরা নিজ জেলাকে মুক্ত করে। একই দিনে পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে মাদারীপুর, ভোলা ও নড়াইলকে শত্রুমুক্ত করা হয়। রাতে দৈনিক ইত্তেফাকের বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, পিপিআই সংবাদ সংস্থার প্রধান সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন সৈয়দ নাজমুল হককে আল বদর-আল শামস বাহিনীর খুনিরা তাদের নিজ নিজ বাসভবন থেকে অপহরণ করে। এরপর এ তিনজনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একাত্তরের এ দিনের স্মৃতি হাতড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ূব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর আমরা ছিলাম দত্তেরবাজার ক্যাম্পে। ৪৫০ জন রাজাকারকে সেখানে জড়ো করা হয়। সেদিন ভোর থেকে আমরা রাজকার নিয়ে ব্যস্ত। লামকাইলের আমজাদ স্কুলে তাদের জড়ো করি। সেখানে পাঁচ থেকে ছয় জন করে রাজাকারকে রশি দিয়ে বেঁধে ব্রহ্মপুত্র নদে দাঁড় করাই। উত্তেজিত জনতা তখন বাঁশ দিয়ে তাদের পেটাতে থাকে। পরে আমরা সারিবদ্ধভাবে তাদের গুলি করে মারি। এভাবে সেদিন প্রায় সাড়ে চার শ রাজাকারকে হত্যা করা হয়। দুই শ গজ পর্যন্ত নদী রাজকারের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল।’
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহম্মেদ মৃধা সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০ তারিখে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই গ্রামে ফিরে যেতে থাকি। আমাদের অনেকের বাহন ছিল বাইসাইকেল। বাইসাইকেলের সামনে জাতীয় পতাকা। গ্রামের মানুষ রাস্তার দুই পাশে এসে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল। গ্রামে মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে পরে আবার আমরা ক্যাম্পে ফিরে যাই। সেখানে অস্ত্র জমা দিই।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর