সিরিয়াজুড়ে ইসরায়েলের বিমান হামলা
১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৪ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৫৪
ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত রাজধানী দামেস্কে, অসংখ্য হামলা চালিয়েছে বলে সিরিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে। মূলত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর এই সকল বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, তাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ১০০টিরও বেশি হামলা হয়েছে।
স্থানীয় প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের সাথে সংযুক্ত বলে সন্দেহ করা একটি গবেষণা কেন্দ্র হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল।
ইসরায়েল বলেছে, তারা অস্ত্র চরমপন্থীদের হাতে যেন না যায় সেজন্যে কাজ করছে, বিশেষ করে আসাদ শাসনের পতনের পর।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি বিবৃতি তৈরি করবে বলে জানিয়েছে।
রাশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, ‘সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সংহতি রক্ষা, বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, এবং প্রয়োজনীয় জনসংখ্যার কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে পরিষদ মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ।’
এসওএইচআর জানিয়েছে, গত দুই দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে দামেস্কের একটি স্থান রয়েছে, যা ইরানি বিজ্ঞানীরা রকেট ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি উন্নয়নে ব্যবহার করে।
এই হামলাগুলি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষক সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ নিরাপদ রাখার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষক সংস্থা ওপিসিডব্লিউ (রাসায়নিক অস্ত্র নীরস্ত্রীকরণ সংস্থা) বলেছে, রাসায়নিক অস্ত্র হল এমন এক ধরনের অস্ত্র যা তার বিষাক্ত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যু বা ক্ষতি ঘটায়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ।
২০১৩ সালে সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর আগে দামেস্কে নার্ভ এজেন্ট সারিন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছিল, যার ফলে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিলো।
তবুও, ওপিসিডব্লিউ এবং জাতিসংঘ কর্তৃক সিরিয়ার সরকার ঘোষিত ১ হাজার ৩০০ টন রাসায়নিক ধ্বংস করার পরও, রাসায়নিক অস্ত্রের আক্রমণ বন্ধ হয়নি।
ইসরায়েলি সেনারা গোলান মালভূমি থেকে সিরিয়ার অসামরিক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে, যা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোলান মালভূমির নিরাপত্তা রক্ষায় সামরিক দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর এমনটি ঘটেছে।
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে এবং ১৯৮১ সালে এটি একতরফাভাবে সংযুক্ত করে। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এটি স্বীকৃত হয়নি, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এটি স্বীকৃতি দেয়।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘সিরিয়ায় উদীয়মান নতুন শক্তিগুলোর সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারাটা আমাদের লক্ষ্য। তবে যদি না পারি, তাহলে ইসরায়েল এবং এর সীমান্ত রক্ষায় যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করব।’
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল পূর্বেও সিরিয়ায় বিমান হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে, যা তারা ইরান এবং এর মিত্রদের সাথে যুক্ত লক্ষ্যবস্তুতে পরিচালিত বলে জানিয়েছে। সিরিয়ায় এই হামলার সংখ্যা সম্প্রতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষত অক্টোবর ২০২৩-এ গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর।
সারাবাংলা/এনজে