‘বর্তমান সরকার থাকতেই আ.লীগের বিচার হবে’
১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৫১ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৩০
ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এর জন্য জাতীয় সংহতি রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানবাধিকার সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমের ভুক্তভোগী গণজমায়েত’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই গণহত্যা, পিলখানা হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও খুন, ক্রসফায়ার ও বিচার বহির্ভূত হত্যা, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যা এবং শাপলা চত্বরে গণহত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমের ভুক্তভোগীরা এই গণজমায়েতে অংশ নেন।
গণজমায়েতে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের মানবাধিকার হনন করেছিল। এ ধরনের মানবতাবিরোধী দলের শাস্তি হতে হবে। শুধু জুলাই অভ্যুত্থানেই নয়, শাসনের শুরু থেকেই তারা হত্যা-জুলুম চালিয়েছে। শেখ মুজিবের আমল থেকেই আওয়ামী লীগের হাতে রক্তের দাগ লেগেছিল।
আরও পড়ুন-
- আমি শুধু বাবার হাতটা ধরে হাঁটতে চাই’
- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মায়ের ডাকের গণজমায়েত শুরু
- গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি
- ‘ভারতের সঙ্গে নতজানু নয়, সম্পর্ক হবে চোখে চোখ রেখে’
- বাবা আলী আহসান মুজাহিদকে হত্যার বিচার চাইলেন ছেলে মাবরুর
উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে। এখন প্রশ্ন বিচারের। সেই বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের জাতীয় সংহতি রক্ষা করতে হবে। এই সরকারের থাকা অবস্থায়ই তাদের বিচার নিশ্চিত করব।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছেন। জাতিসংঘের বিধি অগ্রাহ্য করে তিনি গত ১৫ বছরে বিরোধী দল ও মতের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। গুম, হত্যা, জেল-জুলুম চালিয়েছেন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শ্রমিক ও জনতার ওপর।’ এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কল্পনা করা যায় না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একজন মানুষের জন্মের পর থেকেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে— এ কথা বিশ্বাস করলে আর মানবাধিকার খর্ব হয় না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপি জনগণের জন্য শান্তি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করবে— এ কথাও বলেন বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এই গণজমায়েত আয়োজন করে। এ দিন দুপুর ২টায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে গণজমায়েতের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, আজ সরকারের অভ্যন্তরে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশসহ সমাজের সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাঁপটি মেরে বসে আছে। এদের সরিয়ে প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন না করলে অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। তাই আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) শক্ত হোন, দৃঢ় হোন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারতের সঙ্গে আর নতজানু সম্পর্ক নয়, সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। চোখে চোখ রেখে হবে সম্পর্ক। আজ পুলিশ-প্রশাসন সব জায়গায় ফ্যাসিজম আখড়া গেঁড়েছে। সব জায়গা থেকে তাদের উৎখাত করতে হবে। যেখানে ফ্যাসিবাদের উত্থান, সেখানেই আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোস নয়, লড়াই-সংগ্রাম চলবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমাদের লড়াই শেষ হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, ক্ষুদ্র স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থকে একপাশে রেখে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মতো আমরা যদি আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে ওই ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রাজপথে থাকতে পারি, তাহলে চব্বিশের আদর্শে আবারও বিজয়ী হব।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান গণজমায়েতে অংশ নেওয়া অতিথিরা। এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র শামন্তা শারমিন বলেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় অভিযুক্ত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাকে ফিরিয়ে এনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
২০১৬ সালে গুম হয়ে যাওয়া পারভেজের মেয়ে হৃদি উপস্থিত হয়েছিল গণজামায়েতে। বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হৃদি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিল। তার আকুতি উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়।
জুলাই গণহত্যায় নিহত সোহেল রানার ভাই নাবিল তার বক্তব্যে ভাই হত্যার বিচার চান। বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যার পর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে লাশ দাফন করা হয়। আজও আমার ভাইয়ের কবরটা খুঁজে পায়নি।’ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করেন ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর।
মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলামের সঞ্চালনায় গণজামায়েতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এ বি পার্টির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সদস্য সচিব ফুয়াদ হোসেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি মুনীর হোসেন কাসেমী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, প্রয়াত জামায়াত নেতা ডা. ফয়েজের ছেলে ডা. হাসানাত, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়িদ আব্দুল্লাহসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভিডিওবার্তা প্রচার করা হয়। আরও ভিডিওবার্তা দেন সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও জুলকারনাইন সায়ের এবং অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আরএফকে, অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরাও অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শিশু হৃদি, চব্বিশের আন্দোলনে নিহত সোহেল রানার ভাই নাবিল, নিহত শিক্ষার্থী আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ ও আহত রাকিব বক্তব্য দেন। গণজমায়েতে বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, গণহত্যা ও নির্যাতনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গণজমায়েত গুম-খুন বিশ্ব মানবাধিকার দিবস মানবাধিকার দিবস মায়ের ডাক