Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা-জনগণের প্রত্যাশা হোঁচট খেয়েছে’

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪১ | আপডেট: ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৯

ঢাকা: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনকে সদ্য বিদায়ী বছরের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে অভিহিত করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। তবে এই পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে না পাওয়ার আক্ষেপও রয়েছে তাদের। বলছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফলে জনগণ ও চব্বিশের আশা-আকাঙ্ক্ষা হোঁচট খেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গণঅভ্যুত্থানে মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দুঃশাসনের অবসান হয়েছে— এই প্রাপ্তিকেই নতুন বছরের পাথেয় হিসেবেও দেখছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। তারা বলছেন, নতুন বছরে জনগণ যেন ভোটাধিকার ফিরে পাবে এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে— এটিই প্রত্যাশা তাদের।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় প্রজ্ঞা ও পরিপক্কতার নজির রাখতে পারছে না। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সরকার। ফলে অনেক কাজ শুরু করেও হোঁচট খাচ্ছে। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার ঐক্য গড়ে তুলবে এবং জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে— এমনটিই প্রত্যাশা করছেন বাম নেতারা।

জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রহসন করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ১৫টি বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা দেশের মধ্যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কথিত উন্নয়ন প্রকল্প সামনে রেখে লুটপাট ও নৈরাজ্য চালু করেছিল। জনগণ সবসময় স্বৈরশাসনের অবসান চেয়েছে। তবে স্বৈরশাসন থেকে কবে মুক্তি পাবে, তা বুঝতে পারিনি।’

রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুতনের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে জনগণের অধিকার আদায়ের পথে মানুষ এক ধাপ এগিয়ে গেছে। এই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলিয়ে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

নানা বিষয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। বিশেষ করে নতুন বছরের শুরুতেই বিভিন্ন পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের খবরের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সমালোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মকাণ্ডেরও।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যতটুকু জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা ব্যবহার করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনজীবনের সমস্যা দূর করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হলেও এখন তারা আর সম্মিলিত ঐক্যের প্রতীক নেই। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান ছুড়ে ফেলা ইত্যাদি নিয়ে তাদের বক্তব্য ও দাবি-দাওয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকেই বাধাগ্রস্ত করছে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক ও বাম জোটের সাবেক সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। এর মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন প্রধান অর্জন। এর মধ্য দিয়ে শ্রমিক-কৃষকসহ মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০২৫ সালে সরকার নির্বাচন দিয়ে জনগণকে গণতান্ত্রিক যাত্রায় ওঠার সুযোগ করে দেবে, এটিই প্রত্যাশা। সেটি মেহনতি মানুষের লড়াই-সংগ্রামকে আরও এগিয়েও নেবে।’

গত ৩১ ডিসেম্বর শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সরকার জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করবে জানালে শহিদ মিনারের কর্মসূচি সমাবেশের মধ্য দিয়েই শেষ করা হয়। বজলুর রশিদ মনে করছেন, ওই ঘোষণাপত্র ছাত্রদেরই ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। কারণ সরকারের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা কঠিন।

বজলুর রশিদ বলেন, ‘সরকারে যারা আছেন তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এখন সরকার জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা বলছে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে। কিন্তু এই জাতীয় ঐক্য কখনোই হবে না। কারণ ধনিক শ্রেণির সঙ্গে গরিব শ্রেণির ঐক্য হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তানিদের তাড়ানো ছিল জনগণের একমাত্র লক্ষ্য। আর চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। তাই সরকারের উচিত হবে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য করার চেষ্টা না করে বরং যারা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বৈষম্যবিলুপ্তির জন্য কাজ করবে, তাদের মধ্যে ঐক্য হতে পারে। এককথায় গণঐক্য গড়ে তোলা যেতে পারে।’

এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা জোট সম্প্রসারণ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচন ও জনসম্পৃক্ত বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য নতুন জোট গড়ার জন্যও কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে বাম ঘরানার প্রগতিশীল অন্য রাজনৈতিক দল ছাড়াও অন্যান্য দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গড়ে তুলতে কাজ করছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন বাম গণতান্ত্রিক জোট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর