‘জয়নুল আবেদিন আমাদের জীবিত ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছেন’
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫২ | আপডেট: ৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৬
ঢাকা: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেছেন, জয়নুল আবেদিন আমাদের জীবিত ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছেন। তার চিত্রগুচ্ছে মন্বন্তর ও জন-বিপন্নতা ধারণ করে তিনি দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে প্রশ্ন আসে সমসাময়িক অন্য শিল্পীদের চিত্রে সেসব বিষয় কতটা গভীরভাবে এসেছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘ইউরোপীয় শিল্প-আধুনিকতা দিয়ে জয়নুল-চিত্রকলাকে যেমন ব্যাখ্যা করা যাবে না, তেমনি কলকাতার শিল্প-স্কুল দিয়েও হুবহু অনুধাবন করা যাবে না তাকে। জয়নুলের লড়াই ও অর্জন পূর্ববাংলার জনমানুষকে ঘিরেই মূলত আবর্তিত।’
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী। জয়নুল আবেদিনের চিত্রকলায় মানুষ ও সমাজচেতনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আবদুস সাত্তার। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ নিজার।
মোহা. নায়েব আলী বলেন, ‘জয়নুল আবেদিন এদেশের মাটি ও মানুষের শিল্পী। বাংলার খেটে খাওয়া জনতা তার চিত্রকর্মে বলিষ্ঠ ভাষা পেয়েছে। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি, তাই একাডেমি পরিবার বিশেষ গর্ব অনুভব করে।’
অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘জয়নুল যেমন তার চিত্রকলায় সৌন্দর্যের সন্ধান করেছিলেন তেমনি যা সুন্দর নয় তাকেও তিনি উপস্থাপন করেছিলেন। জীবনের সুন্দর প্রতিষ্ঠায় যে শক্তি বিরোধিতা করে তিনি তাকেও চিহ্নিত করেছেন। তার দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা ঔপনিবেশিক চেতনালালিত অভিজাত নাগরিকদের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ। পাকিস্তান শাসনামলে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি পূর্ব বাংলার ঢাকায় মানুষের জন্য শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের সৃষ্টিকর্মের গুরুত্ব ও মর্যাদা দানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প ফাউন্ডেশন। ময়মনসিংহে তার শিল্পকর্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন জয়নুল সংগ্রহশালা। যাতে রাজধানীর বাইরের মানুষেরাও শিল্পের সৌন্দর্য আস্বাদন করতে পারে। সর্বোপরি তার অসাস্প্রদায়িক চেতনা, প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং শৈল্পিক কুশলতা তার চিত্রকলায় বিশিষ্টতা দান করেছে।’
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের শিল্পকলা আন্দোলনে জয়নুল আবেদিনের অবদান অবিস্মরণীয়। লোকবাংলা প্রাণ পেয়েছে তার রংতুলির ছোঁয়ায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি-মন্বন্তরের সঙ্গে লড়াই আর স্বাধিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে উদ্বেলিত জাতির প্রতিটি পর্ব জয়নুলের সৃষ্টিতে নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
তারা বলেন, উত্তরপ্রজন্মের শিল্পীদের কাছে জয়নুল আবেদিন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কী করে একজন শিল্পী তার ব্যক্তিগত সাধনা দিয়ে গোটা জনগোষ্ঠীর শিল্পস্বর হয়ে ওঠেন- তা জয়নুলের কাছ থেকে শিক্ষণীয় বিষয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।
সারাবাংলা/পিটিএম