সবজিতে স্বস্তি থাকলেও ভরা মৌসুমে বাড়তি চালের দাম
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাজারে চালের দাম আরও বেড়েছে। ভরা মৌসুমে চালের অতিরিক্ত দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এদিকে বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের সরবরাহে ফের সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।
এর বাইরে শীতকালীন সবজিসহ প্রায় সবধরনের শাকসবজির দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যেই আছে। মুদিপণ্য ও মাছের দাম আগের মতোই কিছুটা কম আছে। ব্রয়লার মুরগির বাড়তি দাম এখনও কমেনি।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার ও আসকার দিঘীর পাড় কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
চালের বাজারে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ থেকে ১০ টাকা।
বিক্রেতাদের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে প্রতি কেজি পাইজাম আতপ ৭৫ টাকা, কাটারি আতপ ৮৫ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ ৭০ টাকা, নাজিরশাইল হাফসিদ্ধ মানভেদে ৮৫ ও ৮৮ টাকা, জিরাশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট আতপ ও সিদ্ধ ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে সপ্তাহের শুরুতে পাইজাম ৭০ টাকা, কাটারি ৭৬ টাকা, জিরাশাইল ৭৩ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ ৬১ টাকা ও স্বর্ণা সিদ্ধ ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামের চালের পাইকারি বাজার পাহাড়তলী ও চাক্তাইয়ে দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
পাইকারি বিক্রেতারা অবশ্য আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটকে চালের দাম বাড়ার জন্য দায়ী করেছেন। চাক্তাই বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জামাল উদ্দিন সওদাগর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাল আমদানি হয়েছে সত্যি। কিন্তু আমদানিতে খরচ বেশি পড়েছে। আবার কিছু আমদানিকারক মজুতদারি করে বাজারে ক্রাইসিস তৈরি করছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে যে দামে পাচ্ছি, বস্তায় ৫০-১০০ টাকা লাভে বিক্রি করে দিচ্ছি। কারণ, আমাদেরও পরিবহণ খরচ আছে।’
চালের দাম নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে রিকশাচালক মো. আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা ইনকাম করি, পাঁচ কেজি চাল কিনতে সব টাকা খরচ হয়ে যায়। ঘরে আছে পাঁচজন। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে বাজারে আবারও বোতলের সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হচ্ছে। গত মাসে সরকারিভাবে দাম বাড়ানোর পর এ সংকট কেটে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ফের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও তেল বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে মুদি দোকানে প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার নগরীর আসকারদিঘীর পাড় এলাকায় বিভিন্ন মুদি দোকানে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হতেও দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকায়, পাম তেল ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকায়, পাম তেল সুপার ১৫৯ থেকে ১৬২ টাকায়।
খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ২৪০ টাকা ও বোতলজাত ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ গত সপ্তাহে খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ের রাজীব স্টোরের মালিক রিপু নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না। বিশেষ করে সয়াবিন তেলের বোতল একদমই পাওয়া যাচ্ছে না। আজ (বৃহস্পতিবার) কোম্পানির লোকজন এসে বলে গেছে, লিটারে তেলের দাম সামনে আরও অন্তত ৮ টাকা করে বাড়বে।’
মুদি দোকানে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্যাকেটজাত চিনি প্রতিকেজি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই কেজি প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা এবং নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারে বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাজির দেউড়ি বাজারে ২১০ টাকা, আবার অলিগলির দোকানে কোথাও ২০০, কোথাও ২০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির এমন বাড়তি দর অব্যাহত আছে। বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গরুর মাংস, খাসির মাংসের দামে হেরফের হয়নি। গরু ও মহিষ কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৫৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার থেকে ১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম প্রতিডজন ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামে হেরফের হয়নি।
মাছের দাম গত সপ্তাহের মতো কমতির দিকে আছে। বৃহস্পতিবার রিয়াজুদ্দিন বাজারে চাষের শিং মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছ আকারভেদে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়, বড় চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, চাষের কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, সামুদ্রিক পাঁচমিশালি মাছ ১৫০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১ হাজার ৫৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে এসেছে নতুন দেশিয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ। সপ্তাহের শুরুতে প্রতিকেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দাম কমে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজও গত সপ্তাহের মতোই প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন নতুন আলু প্রতিকেজি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল আলু, সাদা আলু, বগুড়ার আলু, মুন্সিগঞ্জের আলুও দাম কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য শীতকালীন সবজির মধ্যে মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, শসা, টমেটোর দাম ১৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে আছে। এছাড়া কচুরমুখী ৭০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচামরিচ কেজি ৪০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি ৫০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাকের মধ্যে, লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ২৫ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম