‘ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় হবে আরেকটি বিপ্লব’
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- আইএসপিএবি’র আয়োজনে চলমান ‘চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ার’র দ্বিতীয় দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মুনীর হাসান ২০৩৭ সালের মধ্যে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বদৌলতে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরেকটি বড় বিপ্লবের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে মেলা প্রাঙ্গনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘দ্যা রাইস অফ এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) আনলকিং টুমরোস পসিবিলিটি’- শীর্ষক এ সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাব দেন মুনীর হাসানসহ উপস্থিত অতিথিরা।
সেমিনারের মূল বক্তা মুনীর হাসান বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে প্রতি ১৫ বছর পর পর একটি বিপ্লব হচ্ছে। ১৯৯২ সালে প্রথম বিপ্লব ছিল ইন্টারনেটের বিকাশ। ২০০৭ সালে পেলাম স্মার্টফোন। স্মার্টফোন কিন্তু ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর ছিল। ইন্টারনেটের কারণেই স্মার্টফোন বিকশিত হয়েছে। আমাদের হাতের মুঠোয় দুনিয়াটা চলে এসেছে। তার ১৫ বছর পর ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি আসলো এবং এর আর্টিফিশিয়াল বিপ্লবটি আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। সে হিসেবে আমি মনে করছি ২০৩৭ সালের দিকে আরেকটি নতুন বিপ্লব হবে।’
‘আগের শিল্প বিপ্লবগুলো হয়েছে স্ট্রিমপাওয়ার, ইলেকট্রিসিটি এবং ট্রানজিস্টার। কিন্তু এগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটার কোনো যোগসূত্র ছিল না। এখন আমরা দেখছি ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেকশন হচ্ছে স্মার্টফোনের। এ দুটোর সঙ্গে কানেক্টেড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এ তিনটার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু সামনে বিপ্লব হবে।’
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজম্মকে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার- এগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। শুধুমাত্র দক্ষ হলে হবে আবার তা-ও না। আমরা যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করবো আমাদের সিস্টেমেটিক হতে হবে। সামনে আমাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, আবার সম্ভাবনাও আছে।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফাইবার হোম লিমিটেড বাংলাদেশের চীফ ইনফরমেশন অফিসার সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব। এগুলো আমরা ব্যবহার করবো যাতে আমাদের কাজ সহজ ও তাড়াতাড়ি করতে পারি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর যা হোক মানুষ না। কাজেই সেটা যেন আমাদের নিয়ন্ত্রক না হয়ে ওঠে।’
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টুটুন চন্দ্র মল্লিক বলেন, ‘এআই বা রোবোটিকস দুটিই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। ২০০৮ ও ২০০৯ সালের পর এগুলোর উত্থান। মাইক্রো ইলেকট্রনিকস এ বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা এটা নিয়ে কাজ করছে। অনেকে বলে বাংলাদেশে এআই একটি হুমকি হিসেবে আসবে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে সুবিধাও নেওয়া যাবে।’
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক আজিজ জাহেদ বলেন, ‘এআই এর ব্যবহার আমাদের সহযোগিতা করবে। তবে সেটাকে দিয়ে পুরো কাজ করানো যাবে না। মূল কতৃত্ব আমাদের নিজ হাতে রাখতে হবে এবং এর প্রসেসটা আমাদের শিখতে হবে।’
সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান সিডাটার রিজিওনাল সেলস অফিসার জ্যাকি চাইসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
মেলার দ্বিতীয়দিন সকালে আন্ত:স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরীর আটটি স্কুল অংশ নেয়। স্কুলগুলো হলো- সিলভার বেলস কিন্ডারগার্টেন এন্ড গার্লস হাই স্কুল, আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ।
মেলা প্রাঙ্গনজুড়ে বিভিন্ন স্টলে দ্বিতীয় দিনেও প্রচুর দশনার্থীর উপস্থিতি ছিল। নানা বয়সী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ছিল পুরো আয়োজন।
এর আগে, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), চট্টগ্রাম বিভাগ আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম আইসিটি ফেয়ার-২০২৫’ উদ্বোধন হয়। চট্টগ্রামে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় দেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলা.নেটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্পন্সর হিসেবে আছে।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি