দাদা বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হত্যার শিকার শিশু, আসামির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:৫৮
বরিশাল: জেলার গৌরনদীতে শিশু সাফওয়ান আহমেদ (১০) হত্যা মামলার দুই আসামির বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও বাধার মুখে পড়েছেন। এমনকি বাধার মুখে অগ্নিকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে পারেনি কেউ।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার মধ্য হোসনাবাদ গ্রামে শিশুটির জানাজা নামাজের আগে এমন ঘটনা ঘটে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে একটি ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সাফওয়ান আহমেদ মধ্য হোসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা ইমরান সিকদারের ছেলে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা ইমরান সিকদার স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন। ওই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- ওই গ্রামের লোকমান চৌধুরীর ছেলে রোমান চৌধুরী, তার স্ত্রী আঁখি বেগম, বোন রাবিনা আক্তার ও শরিকল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মালেক চৌধুরীর ছেলে মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
জানা গেছে, বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতো সাফওয়ান আহমেদ। সেখান থেকে বরিশালে দাদা বাড়িতে বেড়াতে আসা শিশুটি বুধবার দুপুরের পর নিখোঁজ হয়। পরদিন ভোরে ফজরের নামাজ শেষে স্থানীয়রা মান্না বেপারীর ঘরের পাশে ডোবায় সাফওয়ানের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর তাকে খুনে জড়িত সন্দেহে প্রতিবেশী রোমান চৌধুরী ও ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে মারধর করে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব তাদের উদ্ধার করে।
মামলায় বাদীর বরাত দিয়ে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জমির সীমানা নিয়ে তাদের সঙ্গে গ্রেফতার চারজনসহ অপর নামধারী পলাতক আসামি লোকমান চৌধুরী ও শাহাদাত প্যাদার বিরোধ রয়েছে। এর জেরে আসামিরা বাদীর বাবা বারেক সিকদারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ধারাবাহিকতায় তার সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ গুমের চেষ্টা করেছে। সাফওয়ান নিখোঁজ হওয়ার আগে স্থানীয়রা তাকে রোমান চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাফওয়ানের মরদেহের ময়নাতদন্ত শুক্রবার দুপুরে সম্পন্ন করা হয়। পরে তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আসর নামাজের পর জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তবে জানাজার আগে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা ইউপি সদস্য ও রোমান চৌধুরীর ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে।’
নাম প্রকাশ না করে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নিহত শিশুর জানাজায় অংশ নেন। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়।
এদিকে সাফওয়ানের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার হোসনাবাদ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানায়।
এদিকে আদালতের জিআরও এএসআই বেল্লাল হোসেন জানান, আসামি চার জনকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। হত্যার রহস্য উদ্ধারে গ্রেফতার আসামিদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। তবে শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় রিমান্ডের শুনানি হয়নি।
সারাবাংলা/পিটিএম
আসামির বাড়ি অগ্নিসংযোগ টপ নিউজ দাদা বাড়ি বেড়াতে গিয়ে শিশু হত্যার শিকার