‘দুদক যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারা কেউ ছাড় পাবে না’
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৮ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৭
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী বলেছেন, দুদক যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারা কেউ ছাড় পাবে না। তাদের হয় কারাগারে থাকতে হবে নয়তো জামিনে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুদক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহযোগিতা নিয়ে মাসুদকে বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ থেকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।’
জয়নুল আবেদীন শিবলী আরও বলেন, ‘অবৈধভাবে প্রায় দুই কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ আছে। রিমান্ডে এনে সেসব অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
দুদকের এই কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এ পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অনিয়ম দুর্নীতির মামলার যারা আসামি সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।’
দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় । ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহায়তায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আজ দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে সেগুনবাগচিায় দুদক কার্যালয়ে হাজির করা হয় মাসুদ বিশ্বাসকে। প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে, গত ২ জানুয়ারি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মাসুদ বিশ্বাস নিজ নামে এক কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ ও অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়ার পর গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। অভিযোগ তদন্তে সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিএফআইইউয়ের সাবেক এই প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি ঘুসের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে সেটির শেষ টানা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে ‘সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের আরও বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মাসুদ বিশ্বাসের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৭২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(১) ধারায় পৃথক সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির অনুমোদন করেছে কমিশন।
দুদক গোপন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মাসুদ বিশ্বাসের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।
সারাবাংলা/এনএল/এসআর