জুলাই-আগস্টের ধাক্কা, কেফোরডিএম প্রকল্পে বাড়ছে মেয়াদ
১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৯ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৮
ঢাকা: জুলাই আগস্টের ধাক্কায় পিছিয়েছে ‘নলেজ ফর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ (কেফোরডিএম) প্রকল্পের কাজ। এজন্য কেফোরডিএম দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব করছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় কমিয়ে ধরা হয় ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এবার দ্বিতীয় সংশোধীতে ১ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল, জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি ও সুইজারল্যান্ড সরকারের অনুদান রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদকাল ছিল ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে ৬ মাস বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এবার দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৪ বছর সময় লাগবে।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উপায়-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে ইআরডির সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া সরকারি সংস্থাগুলো ও নাগরিক সমাজের বহুমুখী অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করা এবং একটি সার্বিক বৈদেশিক সহায়ভা সংগ্রহের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। যার মাধ্যমে প্রচলিত ও বিকল্প উৎস হতে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।
দ্বিতীয় সংশোধীত প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং লিঙ্গ সমতা সূচকে সাফল্য অর্জনসহ দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এর মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে উন্নয়ন সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঐতিহাসিকভাবে দেশীয় সঞ্চয়-বিনিয়োগের ব্যবধান এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন সহায়তা বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার সমর্থন করছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ তার জিডিপি ও উন্নয়ন ব্যয়ের অনুপাত হিসাবে উন্নয়ন সহায়তার উপর নির্ভরতা কমাতে সক্ষম হয়েছে। এরপরও উন্নয়ন সহায়তা বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এখনও অবদান রাখছে। একটি প্রাণবন্ত এবং উৎপাদনশীল সরকারি খাত তৈরিতে, পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরিতে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকারকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নীতি-নির্ধারণী অঙ্গনে কৌশলগত স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য তার চলমান নীতিনির্ধারণী সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং উন্নয়ন সহায়তা কমার ফলে উদ্ভুত উন্নয়ন প্রকল্পের উচ্চতর ব্যয়ের যোগান নিশ্চিত করতে বিকল্প অর্থের সংস্থানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এসডিজি-১৭: টেকসই উন্নয়নের জন্য গ্লোবাল পার্টনারশিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যসমূহ অর্জনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে, এসডিজির ১৭ নম্বর লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইউএনডিপির সহায়তায় এবং ইআরডির বাস্তবায়নাধীন কেফোরডিএম প্রকল্প অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত জুলাই থেকে আগস্ট সময়কালে দেশের প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী সরকার পরিবর্তনের কারণে প্রায় আড়াই মাস (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি) প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এতে বেশ কিছু পরিকল্পিত কার্যক্রম স্থগিত হয়। যেমন- আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক সভা, নির্ধারিত প্রশিক্ষণ, ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে বৈদেশিক ভ্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদনের পরামর্শক চুক্তি স্বাক্ষর এবং জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কাজও পিছিয়ে যায়।
এছাড়া বর্তমানে প্রকল্পে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে, যেগুলো শেষ করতে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন গাইডবুক প্রণয়ন, স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন, বিআইজিএমের সহযোগিতায় পলিসি পেপার প্রকাশ, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চালু করা। প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের লক্ষ্য পূরণ করতে এই কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৫ অক্টোবর ৯ম পিএসসি সভায় প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় এবং চলমান কার্যক্রমগুলো শেষ করার জন্য এবং নতুন প্রকল্পে সুষ্ঠুভাবে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস (জুন ২০২৫ পর্যন্ত ) বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময়ের জন্য অতিরিক্ত ১ কোটি ২ লাখ ২২ হাজার টাকা (৮৫,৯০০ মার্কিন ডলার) তহবিল অনুমোদনের জন্য ইউএনডিপি এবং সুইজারল্যান্ড দূতাবাস সম্মতি দিয়েছে।
এছাড়া বাস্তব কারণে প্রকল্পে প্রস্তাবিত প্রশিক্ষণ, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ও আউটসোর্সিং অঙ্গের ব্যয় কমানো ও সেমিনার, কনফারেন্স ব্যয়, বৈদেশিক ভ্রমণ ব্যয়, কনসালটেন্সি ও গবেষণা খাতসহ কিছু অংশের ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজনে প্রকল্পের সংশোধনী প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস