Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বজনরা, মুক্ত হয়েই জুলাই শহিদদের স্মরণ জওয়ানদের

স্পেশাল করেসপডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৫ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:০১

জওয়াদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বিডিয়ার বিদ্রোহের ঘটনায় দীর্ঘ ১৬ বছর বিনা বিচারে কারাগারে থাকতে হয়েছে জওয়ানদের। জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাদের মূল্যবান সময়। পরিবারকে কাটাতে হয়েছে প্রিয়জন ছাড়া। মুক্তির এ দিনে কারাগার থেকে বের হলে জওয়াদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

স্বজনদের ফিরে পাওয়ার এ মুহূর্তে তারা স্মরণ করেন জুলাই আন্দোলনে শহিদদের।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে দেশের চারটি কারাগার থেকে ১৭৮ জন বিডিআর জওয়ান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ওই চার কারাগারের সামনেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

এদিন দেখা যায়, প্রিয় অভিভাবককে কাছে পেতে স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের সামনে ভীড় করেন। কেউ ফুল হাতে আবার কেউ খাবার হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুর ১টার দিকে একে একে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে তাদের।

বিবিআর জওয়ানরা বেরিয়ে আসলে স্বজনরা দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। অন্যান্য আপনজনেরা কেউ ফুলের মালা গলায় পড়িয়ে দেন কেউ আবার ফুলের তোড়া হাতে দেন। বহু বছর পর জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর জওয়ানরা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এরপর নিজেকে সামলিয়ে বিডিআর সদস্যদের কেউ কেউ বলেন, ‘বিনা দোষে জীবন থেকে আমাদের ১৬টি বছর চলে গেছে। আমাদের কোনো দোষ ছিল না। অন্যায়ভাবে ১৬টি বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এখন মুক্ত আকাশে বের হয়ে আমাদের ভালো লাগছে।’

কারামুক্ত হয়ে আল-আমিন নামে এক বিডিআর সদস্য বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। আমাদের বিনা দোষে এতগুলো বছর ধরে কারাগারে বন্দি করে রেখে দেওয়া হয়। আজ আমরা কারামুক্ত হয়েছি। তবে এখনো আমাদের যেসব ভাই বিনা দোষে কারাগারে রয়েছেন তাদের দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা সরকারকে নেওয়া উচিত।’

বিজ্ঞাপন

স্বজনদের জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় আরেক বিডিআর সদস্য বলেন, ‘আমাদের জীবন তো শেষ, আমাদের জীবনের ১৬টি বছর কারাগারে কেটেছে। আমরা কোনো দোষ করিনি। অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়। এখন পরিবার পরিজনের কাছে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

এ সময় এক বিডিআর সদস্যের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে আমি ফিরে পেয়েছি। কোনোদিন ভাবিনি তাকে ফিরে পাবো। এতদিন কারাগারে তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল।’

এ বিষয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর থেকে সাবেক বিডিআরের সদস্যদের কারামুক্তি শুরু হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪৩ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৭ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৯৫ জন ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জনসহ মোট ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর সদস্য পর্যায়ক্রমে জামিনে মুক্তি পান।

এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিনপ্রাপ্ত বিডিআরের ১৭৮ সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত জামিনপ্রাপ্ত এসব আসামিদের নাম প্রকাশ করেন। বুধবার (২২ জানুয়ারি) তাদের জামিননামা দাখিল করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।

সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই

জুলাই শহিদ বিডিআর জওয়ান বিডিয়ার বিদ্রোহ

বিজ্ঞাপন

'জানালা বাংলাদেশ'র ২৪ বছর পূর্তি
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২৯

আরো

সম্পর্কিত খবর