Friday 24 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন নিয়ে এত গড়িমসি কেন— রিজভী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৫৮ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৫

বনানী কবরস্থানে আরাফত রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর রিজভী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যে গণতন্ত্রের জন্য, এ দেশের মানুষ ১৬ বছর ধরে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত ঝড়িয়েছে, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে এত দ্বিধা কেন, এত গরিমসি কেন? এটা আজকে জনগণের জিজ্ঞাসা।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বনানী কবরস্থানে আরাফত রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর রিজভী এ সব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এটা কি কোনো অন্যায়? অন্তর্বর্তী সরকার মানেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল, গণতন্ত্র মানেই আলোচনা হবে, সমালোচনা হবে। যারা সরকারে থাকবেন, তারা সেটি গ্রহণ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আজ শুধু বিএনপির নয়, জাতীয় জীবনেও একটি বেদনা বিধুর দিন। আজকে থেকে দশ বছর আগে জাতীয় জীবনে এক ভয়ংকর রক্ত পিপাসু দানবের উত্থান হয়েছিল। সেই দানবের নির্মম নির্যাতনে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।’

‘এই অবরুদ্ধে যা তা অবরুদ্ধ নয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, এরপরে বালির ট্রাক দিয়ে চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। মায়ের এই সির্মম নির্যাতনের দৃশ্য দেখে সুদূর মালয়েশিয়ায় আরাফত রহমান কোকোন নিজেকে সামলাতে পারেনি। তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। তার এই করুন বিদায়ের দৃশ্য দেখে সারাবাংলাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল’— বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘এই যে এত ত্যাগ, জিয়া পরিবার থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষের এত আত্মদান শুধু একটু মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য, শুধু একটু বিশুদ্ধ বাতাস নেওয়ার জন্য। এত আত্মত্যাগ এত রক্ত ঝড়েছে। তার ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট পৃথিবী কাঁপানো একটি আন্দোলনের বিজয় দেখেছি। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল সেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

রিজভী বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা এই সরকার নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে, এই সরকার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু, যখন শুনি আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, এ যেন মনে হয় শেখ হাসিনার সেই কথারই প্রতিধ্বনি— আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো লোক কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে এ ধরনের কথা শোভা পায় না।’

তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য কি সমালোচনা করা যাবে না? সরকারের প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ না করে, তার জন্য কি সমালোচনা করা যাবে না? তাহলে কীসের ভয় দেখান যে, এক এগারোর পুনরাবৃত্তি হবে?’

রিজভী বলেন, ‘আমরা সকল ঘটনা অতিক্রম করে, বুক চিতিয়ে লড়াই করে রাজপথে বছরের পর বছর থেকেছি। কোনটাকে সমর্থন করতে হবে আর কোনটাকে নয়, কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে, এটা কি আজ উপদেষ্টারা দেশের প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের শেখাবে?’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো ডেডলাইন নেই কেন? কেন হাসিনার কথার পুনরাবৃত্তি হবে যে, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন? আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। আমরা তো এ কথা শুনতে চাই না। আরে সংস্কার তো হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া। যুগের পর যুগ চলতে পারে সংস্কার। নতুন নতুন সংস্কার হতে পারে। কিন্তু, আপনি গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রের প্রবাহমানতা, আটকে রাখবেন কেন?’

সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আজকে কাদেরকে দিয়ে আপনি জরিপ করাবেন? ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক সরকারি সংস্থা। তাদেরকে দিয়ে নাকি জরিপ করাচ্ছেন। তাদের নাকি জনগণ বলে যে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপর পার্লামেন্ট নির্বাচন। আপনি যদি সরকারি সংস্থা দিয়ে জরিপ করান, ওরা তো সরকারের মুখ দিয়েই কথা বলবে। এগুলো নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা এও শুনছি যে সরকারের ভেতর থেকে কেউ কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করছে। তাহলে তো সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণ প্রশ্ন করতেই পারে। জনগণ তো ভাবতেই পারে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের একটা মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে আমরা দেখেছি এই সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা বিএনপি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দিয়ে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে কথা বলছে।’

‘আমরা এও শুনেছি, উপদেষ্টাদের মধ্যে চেষ্টা করা হয়েছে একটা কিংস পার্টি করার। তারপর প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে তারা প্রাধান্য দিচ্ছে। এটা দেখে কি রাজনীতিবিদরা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না? এগুলো ঠিক করুন। হ্যাঁ, যতুটুকু সংস্কার করার দরকার করবেন। সেখানে তো কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু, অনন্তকাল ধরে সংস্কার চলবে আর নির্বাচন হবে না, এটা হতে পারে না। আমরা এটার বিরুদ্ধে’— বলেন রিজভী।

সারাবাংলা/এজেড/এমপি

বিএনপি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর