উদ্বোধনের একবছর
স্থবির সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর, অপেক্ষা এনবিআরের অনুমোদনের
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৩৯
রাজশাহী: বেশ সাজসজ্জা করে উদ্বোধন করা হয় রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর। বছর না ঘুরতেই সেই বন্দর অনুজ্জ্বল ও কর্মহীন হয়ে পড়ে আছে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায়। চালু হওয়ার কয়েকদিন এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়েছিল। পরে নাব্যতা সংকটের কারণে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করেনি। এখন অবশ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষা। অনুমোদনের পর নাব্যতা সংকট কাটিয়ে এই রুটে ফের পণ্য পরিবহণ শুরু বলে প্রত্যাশা নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের।
৫৯ বছর পর গেল বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি চালু হয় সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর। এর মধ্য দিয়ে এই রুটে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের সংযোগ পুনঃস্থাপন হয়। ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার মায়াবন্দর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু হয়। পাঁচটি নৌযানে আমদানি-রফতানি হয়েছে পাথর ও গার্মেন্টস ঝুট। গোদাগাড়ী সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। বছর না ঘুরতেই স্থবির হয়ে পড়েছে এই বন্দর।
বছরের সবসময় এ নৌপথে পানি থাকলেও পণ্যবাহী বাল্ক বা লাইটার চলাচল করে। তাই নদীর ড্রেজিংয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। স্বল্পমূল্যে পণ্য আমদানি ও পরিবহণ খরচ কম হওয়ায় দ্রুত এ বন্দরে গতি ফিরবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, অন্যান্য বন্দরের তুলনায় স্বল্পমূল্যে পণ্য আমদানি ও পরিবহণ খরচে সাশ্রয় করতে পেরেছেন তারা। সেইসঙ্গে ব্যবসায়ী মহলে গুঞ্জন আছে, নৌবন্দরটি চালু হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের ওপর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কাস্টমের দাবি অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করতেও প্রস্তুত উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই স্থবির হয়েছে বন্দরটি। তবে, কিছুটা সময়ক্ষেপণ হলেও বন্দরটি নিয়ে আশাবাদী বিআইডব্লিউটিএ।
উদ্বোধনের পর চার মাস আমদানি-রফতানির পরীক্ষামূলক পর্যায় শেষ হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ বন্দর নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়। গেল ১৯ ডিসেম্বর নৌবন্দরটি পরিদর্শন করে রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমসহ বন্দর পরিচালনার একাধিক প্রতিনিধি। তখনও সামনে আসে বন্দরের নিজস্ব অবকাঠামো গড়ার প্রসঙ্গটি। তবে পরে পণ্য পরিবহণে অবকাঠামো সমস্যা সামনে আনে কাস্টম। বন্ধ করা হয় আমদানি-রফতানির অনুমতি।
পণ্য আমদানিকারক ও সরবরাহকারী আবু সাঈদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এনবিআর একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে নিজস্ব অবকাঠামো থাকতে হবে। অবকাঠামো না থাকার কারণে তারা অনুমতি দিচ্ছে না। অথচ এ বন্দরের একটা সুন্দর ভবিষ্যত আছে। কাস্টমের কাছে আমরা দেন দরবার করছি। ওনারা এক জায়গায় অনড় হয়ে আছেন, আমাদের অবকাঠামো দেন।’
রাজস্ববোর্ড ও কাস্টম কর্তৃপক্ষের শর্তে উদ্যোক্তারা অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো ধরনের সাড়া দিচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে কথা বলেনি কাস্টমের কোনো কর্মকর্তা। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
![রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর। ছবি: সারাবাংলা](https://www.sarabangla.net/wp-content/uploads/2025/02/Sultanganj_port-2-1.jpg)
রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর। ছবি: সারাবাংলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি করতে পারলে আমাদের ক্যারিং খরচ প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কম পড়বে। সেইসঙ্গে আমাদের অনেকগুলো পণ্য আসবে। কিন্তু এনবিআর অনুমোদন দিচ্ছে না। অনুমোদন দিলে এই এলাকার ব্যবসায়ীরা বেশি করে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘নদীর পানির যে অবস্থা প্রায় ১৮-২০ কিলোমিটার চর পড়ে যাচ্ছে। এটা ড্রেজিং করা দরকার। সে ড্রেজিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়নি। এ কারণে চালুর পরই লাইটার জাহাজ আটকে গিয়েছিল।’
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিঙ্কু সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজশাহীর এই বন্দরটি কী কারণে এখনো আলোর মুখ দেখছে না, তা বলতে পারছি না। এটা আমার কাছে সদিচ্ছার অভাব মনে হয়। কাস্টম চাইলে অনুমোদন দিয়ে দিতে পারে। কারণ ভৌগোলিকভাবে দেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী বন্দর হচ্ছে সুলতানগঞ্জ টু মায়া।’
বিআইডব্লিউটিএর সুলতানগঞ্জ পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দরের নিয়মিত অনুমোদন দেবে এনবিআর। নিয়মিতকরণে চিঠি এখনও আমরা পায়নি। বাণিজ্য নিয়মিতকরণের চিঠি পেলে এই বন্দরও ফের চালু করা হবে।’
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক আরিফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘টেন্ডার করে নদীর নাব্যতার সমাধান করা এটা একটু সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সরকার যেহেতু এটাকে নদীবন্দর ঘোষণা করেছে এটা অকার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই।’
সুলতানগঞ্জ-মায়া পোর্ট অব কল বন্দরটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে কয়লা ও পাথরের চিপস আমদানির অনুমতি রয়েছে। যাতে প্রতিটনে ব্যবসায়ীদের সাশ্রয় হবে ১০ ডলারের বেশি। গেজেট অনুযায়ী এ নৌবন্দরে আসা মালবাহী লাইটার, নদীর ভাটিতে ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ভিড়তে পারবে রাজশাহী নগরীর পাশেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন তাতে সেখানে থাকা বহুমুখী সড়ক ব্যবহারে আমদানি করা পণ্য পরিবহণ আরও সহজ হবে।
সারাবাংলা/পিটিএম