Thursday 13 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভেবেছিলাম আয়না ঘরে বাবা আছে, সেখানেও খুঁজে পাচ্ছি না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৫

কথা বলছেন গুমের শিকার ভিকটিমদের শিশু কন্যারা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘বাবা তুমি কোথায় আছো? ভেবেছিলাম আমাদের বাবা আয়না ঘরে আছে। কিন্তু সেখানেও খুঁজে পাচ্ছি না। প্রায় এক যুগ বাবাকে না দেখেই বড় হয়ে যাচ্ছি। বাবা তোমার হাতটি একটু ধরতে চাই। তুমি কি আসবে না, বাবা বলে ডাকতে পারব না?’ অঝরে কান্না করে এভাবেই বাবাকে খুঁজে বেড়ানোর কথা বলছিলেন গুমের শিকার ভিকটিমদের শিশু কন্যারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মায়ের ডাক আয়োজিত ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিচার প্রক্রিয়া: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এভাবেই বাবাকে খুঁজে না পাওয়ার কষ্ট প্রকাশ করেন। এ সময় গুমের শিকার ভিকটিমদের বেশ কয়েকটি পরিবারের স্ত্রী, কন্যা, মা, বোন ও ভাইসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় গুমের শিকার বেলাল হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সালে গুমের শিকার হই। আয়না ঘর এখনো তিন ভাগের এক ভাগও দেখানো হয়নি। এত জঘন্য আয়না ঘর, যে থেকেছে সে জানে। গুমের শিকার হয়েও দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার পাইনি। আমাদের পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। আমার ধারণা, আয়না ঘরে আর কেউ নেই, সবাইকে মেরে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি গুম খুনে ৮০ জনের বেশি জড়িত। তাহলে কয়েক লাখ অপরাধীর জড়িত থাকার বিষয়টি আসা উচিত। কিন্তু আসল গুটি কয়েকজনের নাম। ছয় মাস পর কেন আয়না ঘর ভিজিট করা হলো? দুই মাসের মধ্যে আয়না ঘর ভিজিট করা উচিত ছিল। আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা কোনো বিচার পাব না।’

গুমের শিকার ভিকটিমদের বেশ কয়েকটি পরিবারের স্ত্রী, কন্যা, মা, বোন ও ভাইসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। ছবি: সারাবাংলা

গুমের শিকার ভিকটিমদের বেশ কয়েকটি পরিবারের স্ত্রী, কন্যা, মা, বোন ও ভাইসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। ছবি: সারাবাংলা

গুম হওয়া কুমিল্লার হুমায়ূন কবির পারভেজের স্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর নিকৃষ্ট অপরাধ গুম। এটা খুনের চেয়েও ভয়ানক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ওপর শেখ হাসিনা সরকার নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। আমার স্বামী কুমিল্লার লাকসামের উপজেলা বিএনপি সভাপতি। তারেক সাইদের নেতৃত্বে তাকে তুলে আনা হয়। ঘাতকদের কানে সেদিন করুণ আর্তনাদ পৌঁছেনি। আজ আমাদের বিচার পাবার দিন এসেছে। প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা চাই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা হোক। আর বিচার দ্রুত শেষ করে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করা হোক।’

বিজ্ঞাপন

গুমের শিকার চঞ্চলের স্ত্রী রেশমা বলেন, ‘১১ বছর ধরে তার ছবি নিয়ে বসে আছি। এত লম্বা একটা মানুষ ওই ছোট আয়না ঘরে কিভাবে ছিল? ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পর তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু আমারা তার খোঁজ এখনো পাইনি। তিনি বেঁচে আছেন কিনা জানি না। তাকে শুধু এক নজর দেখতে চাই।’

এ সময় নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, ‘আয়না ঘর ছয় মাস পর কেন ভিজিট করা হলো- এটি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। এর কারণ হলো সরকার খোঁজ পাচ্ছিল না ঠিক মতো। নেত্র নিউজ আয়না ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় একপ্রকার তারা বাধ্য হয়েছে আয়না ঘর দেখাতে। মাত্র ৮৪ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। তবে আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সরকারের উচিত জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে এই বিষয়ে কাজ করা।’

সারাবাংলা/এমএইচ/পিটিএম

আয়না ঘর মায়ের ডাক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর