কাঠ পুড়িয়ে কয়লা, হচ্ছে পরিবেশ বিনাশ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০২:৫৯
খুলনা: খুলনায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা। এসব চুল্লিতে বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ কেটে কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে, চুল্লির নির্গত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। উজাড় হচ্ছে বন। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে স্থানীয় বাসিন্দারা।
কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারণে গাছ উজাড় হচ্ছে। পরিবেশ বিনাশ হচ্ছে। ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনেও। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশ সচেতনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনার রূপসা উপজেলার রামনগর, রহিম নগর, শিরগাতি, কাজদিয়া, তালতলাসহ নদীর তীরে কাঠ পোড়াতে তৈরি হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক চুল্লি। এছাড়া বটিয়াঘাটা, ফতেপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সুন্দরবন ঘেষে রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক চুল্লি। পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী এলাকাতেও আছে ৪০ থেকে ৫০টি চুল্লি।
পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর কাঠ পুড়িয়ে চালানো হচ্ছে এ ব্যবসা। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ১০০ থেকে ২৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমণ কাঠ ১৮০ টাকা কিনে কয়লা তৈরি করে ৫০/৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কয়লা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কাঠ পড়িয়ে তৈরি করা কয়লা ব্যাটারি, মশার কয়েল, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ও সিসা তৈরির কারখানায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
পাইকগাছা উপজেলার বাসিন্দা লতিফ শিকদার বলেন, ‘কয়লার চুল্লি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় শিশু-বৃদ্ধসহ সবাই শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাতে কাঠ পোড়া ও কয়লার গন্ধে ঘুমানো যায় না। কয়লা তৈরির কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।’
রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল শেখ বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট দিয়ে মানুষজন চলাচল করতে পারেছে না। এতে ধানসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে রোগবালাই।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সঞ্জয় কুমার মন্ডল বলেন, ‘কাঠ পোড়ানো ধোঁয়ায় বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। বাড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ’কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির চুল্লিগুলো বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ৩ নম্বর নৈহাটি ইউনিয়নের কালীবাড়ি মোড় সংলগ্ন বেলতলা এলাকায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এমন অভিযান চলমান থাকবে।’
খুলনা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক পারভেজ আহম্মেদ বলেন, ‘কয়লা তৈরির অবৈধ চুল্লি বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। যেসব এলাকায় এখনও চুল্লির মাধ্যমে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
সারাবাংলা/এসআর
উজাড় হচ্ছে বন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা খুলনা ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য পরিবেশ বিনাশ স্বাস্থ্যঝুঁকি