Wednesday 12 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বনশ্রীতে সোনা ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ডাকাতি পূর্বপরিকল্পিত: ডিএমপি কমিশনার

স্পেশাল করেসপডেন্ট
৮ মার্চ ২০২৫ ২০:৫৭ | আপডেট: ৮ মার্চ ২০২৫ ২২:০৬

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী (ফাইল ছবি)

ঢাকা: রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৫) গুলি করে সোনা ডাকাতির ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, ডাকাতির ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

গ্রেফতাররা হলেন— মো. কাউছার (৩১), মো. ফরহাদ (৬৪), খলিলুর রহমান (৫০), মো. সুমন (৩০), দুলাল চৌধুরী (৪৩) ও আমিনুল (৩৫)।

গ্রেফতারদের মধ্যে ঘটনার মূলহোতা ছিলেন কাউসার। খলিল, ফরহাদ ছিলেন ব্যাকআপ হিসেবে ও রেকি পার্টিতে দায়িত্বে ছিলেন সুমন, দুলাল চৌধুরী। উদ্ধার অস্ত্রটি ৭ দশমিক ৬২ এমএম রিভলভার। আগের রাতে বনশ্রীতেই ডাকাতি সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেন তারা।

শুক্রবার (৭ মার্চ) রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর ও মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি।

গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত সোনার মধ্যে ৪ ভরি ৯ আনা, বিক্রিত সোনার মূল্যবাবদ নগদ দুই লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা, ঘটনায় ব্যবহৃত একটি ৭ দশমিক ৬২ এমএম রিভলভার, ৪ রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন একজন সোনার ব্যবসায়ী। তিনি রামপুরা থানাধীন সি ব্লকের এভিনিউ রোড-৫ এর অলংকার জুয়েলার্স দোকানের মালিক। প্রতিদিনের মতো তিনি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে দোকান বন্ধ করে দোকানের ১৬০ ভরি সোনাসহ বাসায় ফিরছিলেন।

বিজ্ঞাপন

রাত পৌনে ১১টায় বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির নিজ ভাড়া বাসার গেইটের সামনে পৌঁছামাত্র তিনটি মোটরসাইকেলে করে ৬/৭ জন দুষ্কৃতকারী আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতিসহ তার গতিরোধ করেন। তার কাছে থাকা সোনা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় আনোয়ার হোসেন বাধা দিলে দুষ্কৃতকারীরা তাকে ৪/৫ রাউন্ড গুলি করেন।

দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া গুলি আনোয়ার হোসেনের বাম হাঁটু ও বাম পায়ের উরুতে আঘাত করে। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা তাদের হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে আনোয়ার হোসেনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে তার সঙ্গে থাকা সাইড ব্যাগে রক্ষিত সোনা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেনকে রামপুরার স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য কাজ শুরু করে। পূর্বাপর বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা বিশ্লেষণ, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বরিশাল থেকে একজন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়।

তার দেওয়া তথ্য মতে, বনশ্রীতে ডাকাতি ঘটনার আগে ঘটনায় জড়িতরা একটি প্রস্তুতি বৈঠক করে। প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডিবির চারটি দল নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর এবং মাদারীপুরে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলকে গ্রেফতার করে।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে, তাদের অপরাধের ধরণও একই রকম।

ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সোনার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন নিজ বাড়ির সামনে সশস্ত্র ডাকাতির সেই ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় এবং সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়। ভিডিও আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসে, সেটা অত্যন্ত ভীতিকর। মানুষের মধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে। সেজন্য আমি ঘটনাটি উদঘাটনের জন্য ডিবিকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে ডিটেকশানের দায়িত্ব দেই।’

কমিশনার বলেন, ‘নিবিড়ভাবে কাজ করার পরে আমরা এ ঘটনাটি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় ৭ জন জড়িত ছিল, তারমধ্যে আমরা ৬ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটিও আমরা উদ্ধার করি ২ রাউন্ড গুলিসহ। সঙ্গে সোনা, বিক্রিত সোনার ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা এবং দুটি মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয় তারমধ্যে একটি মোটরসাইকেল আমরা উদ্ধার করি।’

কমিশনার বলেন, ‘এই ঘটনা উদঘাটন করতে গিয়ে আমরা আরও অন্যান্য ডাকাতি, তারমধ্যে অন্যতম ২৪ সালে ডাকাতি করে ফাহিম জুয়েলার্সে ইয়াসিন ও দেলোয়ারকেও আমরা গ্রেফতার করি। ডাকাতরা সংঘবদ্ধ থাকে। অনেকগুলো ডাকাতির গ্রুপ আছে। ঘটনাটি উদঘাটন করতে গিয়ে ওইসব ডাকাত দল চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি এবং অচিরেই তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।’

ঢাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এটি একটি বড় শহর। এ শহরে নানা পেশার নানান গোষ্ঠী এবং প্রচুর ভাসমান লোক আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লোক আসে, লাখ লোক চলে যায়। এ ধরনের একটি শহরে কিছু একটি ঘটনা ঘটলে আপনারা অবশ্যই আতঙ্কিত হবেন না। ডিএমপি আপনাদের পাশে আছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, ঘটনা ঘটলে আমরা সেটি উদঘাটনের জন্য চেষ্টা করি।’

মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াকে অনুরোধ করে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যেটি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকবার যদি প্রকাশ করেন, অনেক শিশু অনেক বৃদ্ধ, অনেক দুর্বল চিত্তের লোক আছেন, তাদের মধ্যে অনেক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। একটি গোয়েন্দা বাহিনী আমাকে জানিয়েছে একটি চ্যানেল থেকে ২ ঘণ্টায় বেশ কয়েকবার প্রকাশ করা হয়েছে ডাকাতির ভিডিওটি।’

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের যে মিশন আমাদের একই মিশন। আপনাদের কাছে অনুরোধ এমন কোনো ঘটনা এমন কোনো দৃশ্য দেখাবেন না, যেটার আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একটি দুটি ঘটনা ঘটতে পারে, আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করি সেই ঘটনাটি উদঘাটনের জন্য। তার একটি উদাহরণ বনশ্রীর ঘটনা।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক, যুগ্ম কমিশনার রবিউল (ডিবি) ইসলাম ও মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম ও রমনার ডিসি মাসুদ আলম।

সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই

ডাকাতি ডিএমপি কমিশনার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর