হঠাৎ পরিদর্শনে দুদক
কাজ ছাড়াই ১১ জনের বেতন নেওয়ার প্রমাণ মিলল বেরোবিতে
১২ মার্চ ২০২৫ ১৭:১২ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৫
রংপুর: ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ ছাড়াই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন— এমন অভিযোগ তদন্ত করতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার (১২ মার্চ) পরিচালিত দিনব্যাপী অভিযানে দুদকের প্রতিনিধিরা নিশ্চিত হন যে, ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কোন ধরণের অনুমোদন ও নীতিমালাই নেই। সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. জলিল মিয়ার একক ইচ্ছায় ২০০৯ সালে এই ইনস্টিটিউটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দিন দুদক রংপুরের সহকারী পরিচালক হুসাইন শরিফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা হুসাইন শরিফ জানান, প্রতিষ্ঠার পর এখানে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. জলিল মিয়া কয়েকজন রিসার্চ অফিসার ও ফেলো ভর্তি করান। কিন্তু এটির কোনো অনুমোদন ও নীতিমালা না থাকায় সেই ফেলোরা আর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেনি। আর এই ইনস্টিটিউটে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো কাজ ছাড়াই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। যা কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই রিপোর্টগুলো কমিশনে পাঠাব। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম এবং ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত এবং তেমন কোনো কাজ ছাড়াই বসে বসে প্রতি মাসে বেতন পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান পরিচালনা করল দুদক। সূত্র জানায়, ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গবেষক ভর্তির অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি ২০২২ সালে জানাজানি হলে এর পর থেকে তেমন কোনো কাজ নেই এখানে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদকের অভিযান। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটে সর্বমোট সাত জন কর্মকর্তা ও একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএস এস কর্মরত আছেন। সাত জন কর্মকর্তার মধ্যে আছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ও শহীদ মুখতার ইলাহীর ভাতিজি মেহজাবিন ইলাহী এবং রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।
গবেষণার অনুমোদন না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়া নিজের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলিলকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই এই ইনস্টিটিউটে গবেষক ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন বলে কথিত আছে এবং তার আমলেই এই ভর্তি শুরু হয়। এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন। তখন এই ইনস্টিটিউটে ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ইনস্টিটিউটে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন বসে বসেই বেতন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় যোগদানের পর জানতে পারি, এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক আমি নিজে। পরে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিই। এটির প্রথম দিকে অনুমোদন ছিল না। ২০২৪ সালের মে মাসে এই ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হলেও নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে নীতিমালা তৈরি করার জন্য কাজ করছি।’
সারাবাংলা/পিটিএম