দ্রুত গেজেট চায় ৪৩তম বিসিএস’র ক্যাডারবঞ্চিতরা
১৬ মার্চ ২০২৫ ১৭:১০ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৬
ঢাকা: দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে চাকরি নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছেন ৪৩তম বিসিএস এর ২য় গেজেট বঞ্চিত ক্যাডাররা। আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে গেজেট চায় ২২৭ জন সুপারিশপ্রাপ্ত ক্যাডারবঞ্চিতরা। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে তারা যেন বৈষম্যের স্বীকার না হওয়ার দাবি জানান তারা।
রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ৪৩ তম বিসিএস এর গেজেট বঞ্চিত ক্যাডাররা এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। অনতিবিলম্বে ৪৩ তম বিসিএস এর ২য় গেজেট বঞ্চিত ক্যাডার অফিসারদের গেজেটভুক্ত করে যোগদান নিশ্চিতকরণের দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ক্যাডার বঞ্চিতরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৪৩ তম বিসিএস এর পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ফারিয়া ইসলাম (পুলিশ ক্যাডারে সুপারিপ্রাপ্ত)। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ৪৩ তম বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহ মো. রায়হান মিয়াসহ আরও অনেকে।
লিখিত বক্তব্যে ক্যাডারবঞ্চিতরা বলেন, ‘আশ্বাস দেওয়া হয়েছিলো, এই ২২৭ জনের বেশিরভাগই খুব শীঘ্রই চাকরিতে যোগদান করতে পারবে। কিন্তু সেই বক্তব্যের পরও প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে, অথচ গেজেট এখনো প্রকাশিত হয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমাদের সহকর্মীরা যেখানে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরে বেতন-বোনাসসহ পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেখানে আমরা ২২৭ জন পরিবারকে মুখ দেখানোর অবস্থায়ও নেই। আমাদের অনেকেই তাদের পিতা-মাতার বয়স, অসুস্থতা, আবেগ, স্বপ্ন বিবেচনা করে এত বড় দুঃসংবাদ এখনো পরিবারকে জানাননি, কারণ আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ পাবো-এই আশ্বাস পেয়েছিলাম।’
লিখিত বক্তব্যে ফারিয়া ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, আগামী মঙ্গলবারের (১৭ মার্চ) মধ্যে ২২৭ জনের নিরপরাধ সকলের গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এটি আমাদের ন্যায্য অধিকার, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন, এটি আমাদের আত্মসম্মানের প্রশ্ন। যে বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশে আজ ২২৭টি পরিবারের সাথে চরম বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সম্মান জানাবেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ক্যাডারবঞ্চিত রায়হান মিয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসনে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছেন গেজেট হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা যেন ঈদটা পরিবারের সাথে আনন্দ করতে পারি। ঈদের আগে যেন গেজেট হয় সেটিই আমাদের দাবি।’
লিখিত বক্তব্যে ক্যাডারবঞ্চিত ফারিয়া ইসলাম বলেন, আমরা ৪৩তম বিসিএস এর দ্বিতীয় গেজেট বঞ্চিত ২২৭টি পরিবার আজ আবারও আপনাদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশবাসীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি বলেন, মেধাভিত্তিক জাতি গঠনের লক্ষ্যে শতভাগ কোটামুক্ত ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় দীর্ঘ চার বছর ধরে নিজের মেধা, যোগ্যতা, পরিশ্রম, মা বাবার আজীবনের ত্যাগ এবং শিক্ষক-আপনজনদের অশেষ আশীর্বাদে আমরা ২ হাজার ১৬৩ জন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগের স্বপ্ন দেখেছিলাম। দীর্ঘ দশ মাস ধরে দুই ধাপে পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর যোগদানের তারিখ নির্ধারণ করে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত গেজেট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২৮ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের যোগদান পিছিয়ে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। আমরা এটিকে নিয়তির অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। এরই মধ্যে যোগদানের প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে অনেকেই পূর্বের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু কে জানতো, আমাদের জন্য আরও বড় আঘাত অপেক্ষা করছিল। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ যোগদানের একদিন পূর্বে প্রকাশিত নতুন গেজেটে আমাদের ২২৭ জনের নিয়োগ স্থগিত করে গেজেট প্রকাশ করা হয় যা আমাদের জীবনকে এক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপনারা জানেন বিসিএস এর ইতিহাসে একবার গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর নিয়োগ স্থগিত করার উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই। আমাদের ২২৭ জন সুপারিশপ্রাপ্ত অফিসারদের নিয়োগ স্থগিত করে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশিত হলে ৩১ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে আমাদেরকে ২য় গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার যৌক্তিক কারণ জানতে চাই। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমাদের কাছে পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে। এর প্রেক্ষিতে আমরা সকলেই সেই সুযোগ গ্রহণ করি এবং সুবিচারের আশায় অপেক্ষা করতে থাকি।’
পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত সকল মিডিয়ার সামনে স্পষ্ট ভাষায় জানান যে, যদি কারও বিরুদ্ধে তিনটি গুরুতর অভিযোগ- ফৌজদারি অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারাদেশ না থাকে, তবে তারা যোগদান করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, এই প্রক্রিয়ার সাথে যেহেতু আরও দুটি অফিস অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির দপ্তর জড়িত, নতুন গেজেট প্রকাশিত হতে দুই থেকে তিন কর্মদিবস প্রয়োজন হতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২৮-৪২তম বিসিএস পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে গেজেট বঞ্চিত ২৫৯ জনের সকলকে অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিয়োগ প্রদান করেছেন যা বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু একই সময়ে, ৪৩তম বিসিএস থেকে ২২৭ জনকে বাদ দেয়া স্পষ্টত পূর্বের বৈষম্যেরই ধারাবাহিকতা। এই বৈষম্য শুধু ২২৭জনের পরিবারের প্রতি অন্যায়ই নয়-নতুন বাংলাদেশের জন্য এটি এক লজ্জাজনক অধ্যায়।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনজে