Monday 17 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির কারণে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বিআরটিসি বাস বন্ধে আ.লীগের সুবিধাভোগী সাবেক অতিরিক্ত সচিবের পাঁয়তারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ মার্চ ২০২৫ ০৯:১১

আওয়ামী লীগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ইমদাদুল হক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালের মুলাদী উপজেলার পাইতিখলায় বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধে মরিয়া হয়ে পাঁয়তারা করছেন দুর্নীতির কারণে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ইমদাদুল হক। বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধের জন্য দফতরটির চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে ইমদাদুল হক তার বর্তমান কয়েকজন সচিব বন্ধুর দাপট দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে। এতে শঙ্কিত বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বিআরটিসি ডিপোর মতিঝিল শাখার ম্যানেজার মেহেদী হাসান এবং বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার জামিল বলেন, ‘সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক ঢাকা-পাইতিখলা রুটে বাস সার্ভিস বন্ধের জন্য অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তা যেহেতু ভালো, আমরা চাই গাড়ি চলুক। কারণ এই গাড়ির রাজস্বের টাকা দিয়ে আমাদের বেতন হয়। কিন্তু আমাদের চেয়ারম্যানকে তিনি ম্যানেজ করলে করার কিছু থাকবে না। আমাদেরও তো চাকরি বাঁচিয়ে চলতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলার আসামি মো. ইমদাদুল হক। এই ঘটনায় চলতি মাসের ৬ মার্চ ইমদাদুল হকসহ ২৩ জনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। কিন্তু তারপরও দফতরে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পদোন্নতি পাওয়া সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব। এমনকি, এই রুটে নাজিরপুর-রামারপোল সংযোগ সেতুটি নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষের নামে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন তিনি।

ঢাকা-পাইতিখলা (মুলাদী) রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধ করার পাঁয়তারায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এমনকি এই বাস বন্ধ না করার জন্যও বিআরটিসি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, ‘ঢাকা থেকে পাইতিখলা বাস সার্ভিস শুরু হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম, যে এখন আর কষ্ট করে আমাদের যাতায়াত করতে হবে না। কিন্ত শুনেছি একজন আওয়ামী লীগের সাবেক আমলা নাকি এটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ যে জনগণের ভালো চায় না, সেটা এই লোকের মাধ্যমে আবারও প্রকাশ পাচ্ছে।’

অন্যসব গাড়ি চললেও বিআরটিসির বাস চলাচলে সমস্যা কি- প্রশ্নে মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘রাস্তা ও সেতুর বিষয়টি এলজিইডি’র না। সেতুটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হচ্ছে। আমার মনে হয়েছে এখানে গাড়ি চলাচলে উপযোগী না।’ দুদকের দুর্নীতি মামলা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার কিছু বলার নাই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে মুলাদী উপজেলা প্রকৌশলী তানজিলুর রহমান বলেন, ‘গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা ও ব্রিজ পুরোপুরি ফিট আছে। আমরাও চাই বাস চলুক, তাহলে মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মানুষ খুব সহজেই ঢাকা যেতে পারবে। রাস্তা ও ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচলে মৌখিক অনুমতি দেওয়া আছে।’

এদিকে, ব্রিজটি উদ্বোধন ও কাজের বর্তমান অগ্রগতি নিয়ে এলজিইডি এর প্রধান প্রকৌশলীকে জানানো হলে তিনি ব্রিজের উপর দিয়ে সকল ধরণের যানবাহন চলাচল চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালের মুলাদী উপজেলার পাইতিখলায় সরাসরি বাস সার্ভিস শুরু হয়। বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে শুরু হয় এই পথ চলা। ফলে দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে জনমনে। কিন্তু সেই স্বস্তি বিষাদে পরিণত করছেন ইমদাদুল হক।

ঢাকা-পাইতিখলা পর্যন্ত যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ছিল আড়িয়াল খাঁ নদীর উপরে নাজিরপুর-রামারপোল সংযোগ সেতু। ২০১৬ সাল থেকে দীর্ঘ সময়ে নির্মাণ শেষ হওয়া বর্তমানে সেতুটি দিয়ে চলাচল করছে ট্রাক, বাস ও প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন। কিন্তু সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী একটি বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু হওয়ায় নিজেই বাস সার্ভিস নামানোর জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে।

গত ডিসেম্বরে এই রুটে বাস চলাচল শুরু করা হলে চার দিনের মাথায় বিআরটিসি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠিতে ঢাকা-পাইতিখলা বিআরটিসির রুট পারমিট বাতিলের আবেদন জানান ইমদাদুল হক। এ বিষয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ইমদাদুল হক সাবেক অতিরিক্ত সচিব তাই তার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি রাস্তার সমস্যার কথা বলেছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব, যদি রাস্তা ঠিক থাকে তাহলে বিআরটিসি বাস এই রুটে চলবেই। কারও কথায় বাস বন্ধ হবে না।’

এরপর চার দফা তদন্ত করে বিআরটিসি দফতর। ইমদাদুল হক ব্যক্তিগত স্বার্থে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাজুল ইসলাম এই রুটে আবারও (১০ ফেব্রুয়ারি) বিআরটিসি বাস চলাচলে অনুমতি দেন।

সকল বাধা পেরিয়ে গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) থেকে ঢাকা-পাইতিখলা রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থে আবারও বাস চলাচল বন্ধের জন্য বিআরটিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. অনুপম সাহাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন ইমদাদুল হক।

সারাবাংলা/এমএইচ/এসডব্লিউ

আ.লীগের সাবেক অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঢাকা-পাইতিখলা রুট বিআরটিসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর