দাবি পূরণের আশ্বাসে কাজে ফিরেছেন মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
১৭ মার্চ ২০২৫ ১১:০৫ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ১১:৩৩
ঢাকা: এমআরটি পুলিশের হাতে মেট্রোরেলের ৪ কর্মী লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। তবে জনসাধারণের ভোগান্তি বিবেচনায় মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিকই ছিল। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সকাল ৯ টা থেকে কাজে যোগ দেন ডিএমটিসিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তবে ৯টার আগ পর্যন্ত টিকিট ছাড়াই গন্তব্যে চলাচল করেছেন যাত্রীরা। এতে রাজস্ব হারিয়েছে রাষ্ট্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে মেট্রোরেলের একজন জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত তাদের আপারেশনাল সব কাজ বন্ধ ছিল।
তিনি বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে যেহেতু ট্রেন চালু ছিল, তাই সকাল ৯ টার আগ পর্যন্ত পেইড জোন বন্ধ থাকায় টিকিট ছাড়াই চলাচল করেছেন যাত্রীরা। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন ৯টা থেকে।
এর আগে, রোববার (১৬ মার্চ) রাতে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারীদের ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা তথ্য তুলে ধরে ৬টি দাবি জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমআরটি পুলিশ সদস্যের হাতে চারজন কর্মী লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এ সময় ৬টি দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিগুলো হলো:
- ঘটনার মূল হোতা পুলিশ সদস্য এস আই মাসুদসহ সকল পুলিশ সদস্যকে শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
- মেট্রোরেল ও এর কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে হবে।
- এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
- স্টেশন কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- স্টেশনে অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি যাতে পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
- আহত কর্মীদের চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মেট্রোরেলের কর্মীরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার (১৬ মার্চ) বিকেল সোয়া ৫টায় সচিবালয় স্টেশনে দুইজন নারী কোনো প্রকার পরিচয়পত্র প্রদর্শন না করেই সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ছাড়া সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে তারা চলে যান।
পরে ঠিক একইভাবে দুইজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ’র সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ’র কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও’র শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করেন। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে। উক্ত পরিস্থিতি মেট্রোরেল কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
বর্তমানে আহত (রাইফেল দিয়ে কাঁধে আঘাত করা হয়) সিআরএকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং টিএমও (গুলি করার জন্য বুকে রাইফেল ধরা হয়) উক্ত ঘটনার বিবৃতি দেওয়ার পর বাসায় যাওয়ার পথে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সারাবাংলা/এনএল/এনজে