Monday 17 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি: যুবকের ২ বার যাবজ্জীবন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫৮ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ১৮:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে চার বছর বয়সী এক মেয়েকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির মামলায় এক যুবককে দু’বার যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে মোট ৬০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত তার স্ত্রীকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

দণ্ডিত যুবক সাখাওয়াত হোসেন (৩০) ও তার স্ত্রী কমলা বেগম (২৭) কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে এ দম্পতি চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাস করতেন।

অপহরণের শিকার শিশুটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার খেজুরতলা এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। তাদের বাড়িও কুমিল্লা জেলায়। তার বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা।

মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, সাখাওয়াত হোসেন নগরীর সিইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি ও তার স্ত্রী অপহরণের শিকার শিশুটির বাসায় সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। ঠিকমতো ভাড়া দিতে না পারায় ঘটনার বছরখানেক আগে সাখাওয়াত দম্পতি বাসা ছেড়ে দেন।

২০১৮ সালের ১৩ জুন সন্ধ্যায় রমজান মাসে ইফতারের দাওয়াতে সাখাওয়াত শিশুর বাসায় যান। ইফতার শেষে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততার ফাঁকে শিশুটিকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে সাখাওয়াত তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে পালিয়ে যান। এরপর তার বাবাকে ফোন করে দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

এ ঘটনায় পরদিন শিশুটির বাবা পতেঙ্গা থানায় সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনার দুদিন পর ১৫ জুন পুলিশ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকার এক বাসায় অভিযান চালিয়ে সাখাওয়াতের স্ত্রীর হেফাজত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় সাখাওয়াতের স্ত্রী, মা ও ভাই এবং অপর এক ব্যক্তিসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। পলাতক সাখাওয়াতকে ১৯ জুন গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মামলা তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পতেঙ্গা থানার তৎকালীন এসআই মামুনুর রশীদ। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে মোট ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দেন।

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, মামলার রায়ে শিশু অপহরণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় এবং মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে একই আইনের ৮ ধারায় সাখাওয়াতকে মোট দু’বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। প্রত্যেক অপরাধের জন্য যাবজ্জীবনের পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড এবং আরও দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উভয় সাজা একইসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আইনে আপীল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩০ বছর। এ হিসেবে সাখাওয়াতের মোট ৬০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

এ দিকে অপহরণ করা শিশু হেফাজতে রাখার দায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ (৩০) ধারায় সাখাওয়াতের স্ত্রীকে মোট ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

তবে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় সাখাওয়াতের মা ও ভাইসহ অপর তিন আসামিকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাখাওয়াত ও তার স্ত্রীকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয় বলে বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন জানান।

সারাবাংলা/আইসি/এইচআই

২ বার যাবজ্জীবন শিশু অপহরণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর