মায়ের হাতের রান্নার অভাব, তবু আনন্দে ভরা ইফতার
১৭ মার্চ ২০২৫ ২২:৫৩
রমজান এলেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবহ বদলে যায়। পরিবার থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাম্পাসই হয়ে ওঠে ঘরবাড়ির মতো, আর বন্ধুরাই হয়ে ওঠে পরিবারের সদস্য। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজেও দেখা যায় এমন চিত্র। আসর নামাযের পর থেকে ইফতারের সময় যত ঘনিয়ে আসে, শিক্ষার্থীদের আনাগোনা তত বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসে। প্রতিদিনই ইফতারের মুহুর্তে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে পুরো ক্যাম্পাসে।
কলেজের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সহ-শিক্ষামূলক সংগঠন, বিভিন্ন জেলার ছাত্রকল্যাণ সমিতি, রক্তদাতাদের সংগঠনসহ বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ইফতারের আয়োজন করে। কেউ কলেজের কেন্দ্রীয় মাঠে, কেউ গাছের নিচে নিরিবিলি পরিবেশে, আবার কেউবা ক্লাসরুমে বসে ইফতার করেন।
একসঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ফলে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে যেমন ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় হয়, তেমনি বন্ধুত্বের সম্পর্কও আরও গভীর হয়। ক্যাম্পাসে ইফতারের এই মিলনমেলায় শিক্ষার্থীরা পরিবারের শূন্যতা খানিকটা হলেও পূরণ করতে পারে।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল কাদের বলেন, পরিবারকে, বিশেষ করে মায়ের হাতের রান্নাকে খুব মিস করি। কারও হাতের রান্নায় সেই স্বাদ পাওয়া যায় না। তবে মেসে বসে একা একা ইফতার করার চেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ইফতার করায় পরিবারের শূন্যতা অনেকটাই পূরণ হচ্ছে।
ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিবা বলেন, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা, খুনসুটি করা এগুলো খুব মনে করি। মায়ের রান্নার স্বাদ তো বারবার বাসার দিকেই টানে! তবু ক্যাম্পাসে ইফতার করার মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ আছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে কেউ ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত স্টল থেকে খাবার কিনে আনে, কেউ শরবত বানাতে ব্যস্ত, তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে মোনাজাত করি। এতে একটা পারিবারিক অনুভূতি তৈরি হয়, যা আমাকে নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জুহাইর আনজুম নাফিস বলেন, বাবা-মা ও ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করতে অভ্যস্ত ছিলাম। এবারই প্রথম বাবা-মাকে ছাড়া ইফতার করছি। প্রথমে মন খারাপ হতো, বাড়ির কথা মনে পড়ত। কিন্তু এখন সহপাঠী ও সিনিয়রদের সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করার আনন্দে সেই অভাবটাও ভুলে গেছি।
তিতুমীর কলেজের ক্যাম্পাসজুড়ে রমজানের এই ইফতার আয়োজন শিক্ষার্থীদের এক অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। পরিবার থেকে দূরে থাকলেও, এই মিলনমেলায় তারা একে অপরের আপন হয়ে ওঠে।
সারাবাংলা/এমআর/এসএইচএস