Wednesday 19 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তামাক পুরোপুরি নিষিদ্ধ সম্ভব নয়, ব্যবহার কমানোর পদক্ষেপ দরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:১৮ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:২০

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ. টি. এম. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই তামাক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা যায়নি। বাংলাদেশেও তামাক পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রে টেক্স বাড়িয়ে এটার ব্যবহার কমিয়ে আনা যেতে পারে। সেই সঙ্গে তামাক চাষ বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে পারলে তামাকের ব্যবহার কমে যাবে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করুন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চীন, জাপান ও ইউরোপীয় দেশে রাস্তায় প্রকাশ্যে ২০ ভাগ মানুষ সিগারেট খায়। কিন্তু বাংলাদেশে এটা খুবই কম দেখতে পাচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের লেগে থাকার জন্য। তামাক সেবন করে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। টোব্যাকো কোম্পানির মূল হাতিয়ার কৃষক। এ জন্য তারা কৃষককে বিনা মূল্যে সার দেয় বা আরো কিছু। বাংলদেশে আমরা ৭০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করে থাকি। একটা আইন করে যদি তামাক চাষ রোহিত করা যায় তাহলে হয়তো কাজ হবে।’

আলোচনার সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব) তামাক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৪৬ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী আর ১৮ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান করেন এবং ২০ দশমিক ৬ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। তবে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিড়ি ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছর) মধ্যে ৬ দশমিক ৯ ভাগ কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যবহার করে। পরোক্ষ ধূমপানের কোন নিরাপদ মাত্রা নাই। প্রাপ্তবয়স্কদের ৪২ দশমিক ৭ ভাগ আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্রে, ৪৯ দশমিক ৭ ভাগ রেস্তোঁরায় এবং ৪৪ ভাগ গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছর) ৫৯ ভাগ পাবলিক প্লেসে এবং ৩১ দশমিক ১ ভাগ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।

বিজ্ঞাপন

এসময় বক্তারা তামাক চাষ বন্ধে গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, রংপুরের লালমনির হাট সহ কয়েকটি জায়গায় তামাক চাষ করা হয়। সেখানে কৃষকদের তামাক চাষ করার জন্য ফ্রিতে বীজ ও সার দেওয়া হয়। এমন কি তাদের আলাদা ভাবে টাকা দেওয়া হয় এটি চাষ করার জন্য। এটি কৃষকরা চাষ করেন কারণ তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাদের সকারের পোখ থেকে সহায়তা করা হলে এবং তামাকের কুফল এর বিষয়ে সচেতন করা গেলে এটি চাষ করা কমে আসবে।

সভায় তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বক্তারা বলেন, তামাক প্রাণঘাতী পণ্য। তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যায় তামাকের কারণে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মুত্যুবরণ করেছে তামাকের কারণে, যা দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৩.৫ ভাগ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত। ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু (১৫ বছরের নিচে) পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে ভুগছে।

সমাজে তামাকের ক্ষয়ক্ষতির প্রভাবের বিষয়ে তারা বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে তামাকজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা ওই বছর জিডিপির ১ দশমিক ৪ ভাগ। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ প্রত্যক্ষ ব্যয় আট হাজার চারশ কোটি টাকা এবং তামাক ব্যবহারের ফলে অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্বের কারণে উৎপাদনশীলতা হারানোর ক্ষতি ২২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। পরোক্ষ ধূমপানের আর্থিক ক্ষতি তামাকজনিত মোট আর্থিক ক্ষতির ১৩ দশমিক ৫ ভাগ। ২৫-৬৯ বছর বয়সি পুরুষ অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতার সময় তামাকজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৭০ ভাগ বেশি।

সারাবাংলা/এমএইচ/এমপি

তামাক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর