ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে রাখার প্রস্তাব ঢাকা চেম্বারের
১৮ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৪ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৭:০৩
ঢাকা: ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ঢাকা চেম্বারের বিভিন্ন নেতা ও এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড মূসক (ভ্যাট) হার ১৫ শতাংশ থাকলেও বিভিন্ন খাতে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণের ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরি হচ্ছে। কর রেয়াতের সুবিধা সবক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি করের বোঝা বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন বাস্তবতায়, আগামী বাজেটে ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারনের পাশাপাশি অনাানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ১ শতাংশ হারে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করে ঢাকা চেম্বার। এর ফলে সামগ্রিক কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি ব্যবসার পরিচালন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ডিসিসিআই’র প্রস্তাবে করজাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ, করহার হ্রাসকরণ, ব্যবসা-বান্ধব করনীতি ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, মূসক ব্যবস্থার সংষ্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতের সুরক্ষা, আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যক্তি শ্রেণির কর কাঠামোর সহজীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করা হয়।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ আগামী অর্থবছর হতে সকল করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করায় এনবিআরকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশে টিনধারীর সংখ্যা প্রায় এককোটি ১৩ লাখের বেশি হলেও ২০২৪ সালের ১ জুলাই হতে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩৭ লাখের বেশি, যার মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯টি।
দেশে করদাতার হার বৃদ্ধি ও করজাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এনবিআরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি। এছাড়াও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজে অনলাইনে কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে অটোমেটেড কর রিটার্ন পদ্ধতি চালু করার উপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ। বিদ্যমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারনের দাবি জানায় ঢাকা চেম্বার। তাছাড়াও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে পণ্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রীম কর ৫ শতাংশ হতে ধাপে ধাপে হ্রাস এবং আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য বিদ্যমান অগ্রীম কর পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তির প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব নীতিমালার ক্রমান্বয়ে সংষ্কারের মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে এনবিআর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করজাল সম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর, কারণ সমাজে কেউ কর দেবে কেউ দেবেনা, তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, গত ১০বছরে টিনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়ালেও কর প্রদানকারীর সংখ্যা কাঙ্খিত মাত্রায় বাড়েনি, যা বেশ হতাশাব্যঞ্জক।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ী সমাজ একমত পোষণ করলে, ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর বহাল না রেখে, সরকার ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে আগ্রহী, তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা একান্ত অপরিহার্য। ভ্যাট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রয়োজনে দেশীয় তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এনবিআর একটি সফটওয়্যার তৈরি করে দিতে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে তিনি ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।’
তিনি আরও জানান, আগামী অর্থবছরে কর রেয়াত ব্যবস্থা আরো উদার করতে এনবিআর আগ্রহী।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি