Wednesday 26 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৬ মার্চ ১৯৭১
কালরাতের ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ০৪:৫৫

২৬ মার্চ ১৯৭১। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এদিন পাকিস্তানি হানাদাররা ২৫ মার্চ রাতে ইতিহাসের যে নিষ্ঠুরতম বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, পরের দিন ২৬ মার্চ ঢাকাজুড়ে ছিল তারই ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল শুক্রবার। এমন পবিত্র দিনেও চারদিকে লাশ আর লাশ। ঢাকা যেন লাশের শহর। একদিকে রাতের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে স্বজন হারানোর শোক, অন্যদিকে পেছনে তাড়া করছিল মৃত্যুভয়। এমন পরিস্খিতিতে স্তব্ধ থমথমে ঢাকাসহ সারাদেশ। এরমধ্যেই কিছু মুক্তিকামী মানুষ হানাদারদের প্রতিরোধে নানাভাবে সংগঠিত হতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

মার্চের ২৬ তারিখ প্রথম প্রহরেই সারা দেশসহ ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। আর ২৫ মার্চ মধ্যুরাতেই শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এদিন ইয়াহিয়া খান তার ভাষণে সারা দেশে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ মুজিবের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগেই আমার উচিত ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কেননা কয়েকটি শর্ত দিয়ে সে আমাকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সে আক্রমণ করেছে। এই অপরাধ বিনা শাস্তিতে যেতে দেয়া হবে না।’

বিজ্ঞাপন

২৫ মার্চ জিরো আওয়ারে গণহত্যা শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ মুজিব স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১২টা ৩০ মিনিটে এই ঘোষণা আসে। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার এই ঘোষণা দেন। যা পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে মুক্তিকামী জনতার সামনে এগিয়ে চলার মূলমন্ত্র।

ঘোষণাটি ছিল এরকম- ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’

শেখ মুজিবের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর ওয়ারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এর পর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সামরিক ও বেসমারিক সব পেশার লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে। ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম শেখ মুজিবের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। একইদিন সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। পরদিন অর্থ্যাৎ, ২৭ মার্চ একটি লিখিত বক্তব্য তৈরি করে দেওয়ার পর ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শেখ মুজিবের পক্ষে ফের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। এই বার্তাটি-ই তখন বিপন্ন জনতার সামনে একমাত্র দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।

শেখ মুজিবের এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর ও নির্বিচারে গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি তাদের সর্বশক্তি নিয়ে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার মুজিবের ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতরে দিয়ে ওঠে রক্ত রাঙানো নতুন সূর্য।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

কালরাত ভয়াল শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা