Sunday 20 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রাহকের ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ
মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বিএসইসি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৩৩ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৩৭

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত মশিউর সিকিউরিটিজের (ট্রেক নং-১৩৪) বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও কর্মকর্তারা যোগসাজোস করে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। এর মধ্যে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। একক কোনো ব্রোকারেজ হাউজ হিসেবে এটাই সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

এরই ধরাবাহিকতায় ব্রোকারেজ হাউজিটির পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শেয়ার ও তহবিল তছরুপের অভিযোগ মানি লন্ডারিং আইনের আওয়ায় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

একই সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালক-কর্মকর্তারা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দুদকে জরুরি ভিত্তি চিঠি পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবসমূহের লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিতকরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বিএসইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ইতিপূর্ব গঠিত তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখিত ফৌজদারি ও সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক সিভিল অপরাধের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ডিএসইর পরিদর্শন দল মশিউর সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঘাটতি পায়। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীরে বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি বাবদ ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সরিয়ে ফেলার তথ্য পায় পরিদর্শন দল। পরবর্তীতে এসব তথ্যে উল্লেখ করে ওই বছরের গত ২৮ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা হয়। এরই ধরাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গণ করে বিএসইসি।

বিজ্ঞাপন

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, সহকারী পরিচালক মো. মারুফ হাসান, সহকারী পরিচালক অমিত কুমার সাহা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ম্যানেজার মোহাম্মদ ইকরাম হোসাইন ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ম্যানেজার শরীফ আলী ইরতেরাজ।

তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের হিসাব, ব্যাক অফিস সফটওয়্যার, অনুমোদিত ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশনের তালিকা এবং নেতিবাচক ইকুইটির অবস্থা যাচাই করে। এছাড়া একই মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, ব্যাংক হিসাব দিয়ে দুটির বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, সিইও, অনুমোদিত প্রতিনিধি এবং অন্যান্য কর্মচারীর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কোনো লেনদেন হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৪ জুন ক্রেস্ট সিকিউরিটিজে ১২৪ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ১৫ জুন বানকো সিকিউরিটিজে ১২৮ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর তামহা সিকিউরিটিজের ১৪০ কোটি টাকা সমন্বিত গ্রাহক হিসেবে ঘাটতি পাওয়া যায়।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত

আইন বিভাগ, মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগের একটি সমন্বিত প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো- প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে এনফোর্সমেন্ট প্রক্রিয়া গ্রহণ করা। মানি লন্ডারিং ও অর্থ আত্মসাতের (প্যানেল কোড, ১৮৬০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ভঙ্গ) বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করা। এ সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লিখিত মশিউর সিকিউরিটিজের পরিচালকরা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবসমূহের লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিতকরণ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি পাঠানো এবং বিদেশ গমনে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি প্রেরণ করা। এসব বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/জিএস/এমপি

পুঁজিবাজার বিএসইসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর