খালি পাহাড়ের কেন দোষ, পাহাড় শান্ত আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:১০ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পার্বত্য চট্টগ্রাম আগের চেয়ে অনেক শান্ত আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
শান্ত পাহাড় হঠাৎ করেই কেন অশান্ত? এবং খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি পাহাড়ে তিনবার চাকরি করেছি। ক্যাম্প কমান্ডার, সিও ও বিগ্রেড কমান্ডার ছিলাম। পাহাড়ের অশান্ত তো আপনারা দেখেনইনি। এখন ওই তুলনা করতে গেলে পাহাড় এখন পুরোটাই শান্ত।’
‘এটা ছোটখাটো অপহরণ, যে চার-পাঁচজনকে ধরে নিয়ে গেছে-মেয়েটিকে মনে হয় ছেড়ে দিয়েছে। এগুলো আমাদের সমতলেও তো হচ্ছে। খালি পাহাড়ে কেন দোষ দেন? পাহাড় আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় আছে, অনেক শান্ত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাঘাইহাটে ছিলাম। সেখানে ল্যান্ডমাইন দিয়ে একসাথে পিকআপ উড়িয়ে দিয়েছে। তিন-চারজন করে মারা গেছে। সেসময় এ খবরগুলো আসেনি প্লাস ওই এলাকায় প্রবেশের অনুমতিও ছিল না। কিন্তু এখন তো পাহাড়ের অবস্থা এতো ভালো-ওই রাস্তা দিয়ে আপনারা সাজেক চলে যাচ্ছেন।’
সম্প্রতি রাউজানে খুন-সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফটিকছড়ি, রাউজান, পটিয়া ও সাতকানিয়া এলাকা হলো পাহাড় ও সমতল। দুটোরই সংমিশ্রণ। চট্টগ্রাম বিভাগের একটি সমস্যা হলো এখানে পড়েছে সব পাহাড়, সমতল ভূমি ও সমুদ্র। বনাঞ্চলও আছে এখানে। এখানকার সমস্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে ভিন্ন। আমরা এ ব্যাপারে আলাপ করেছি।’
‘সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। প্রকাশ্যে কেউ যদি এলাকায় থাকে আমি আপনাদের সামনে হাবিবকে (চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি) নির্দেশ দিয়ে গেলাম যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়।’
যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যৌথবাহিনীর অভিযান কোনোভাবে কমেনি। বরং আপনাদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটে, সত্যি ঘটনা আপনারা অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন। তখন আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু অনেক সময় আছে দু একজন করে কি, ঘটনা সত্যি নয় কিন্তু প্রকাশ করে দেয়। সেসময় ইনভেস্টিগেশন করে দেখা যায় যে ঘটনা সত্যি নয় তখন অসুবিধা হয়। পাশ্ববর্তী দেশের সাংবাদিকরা এর সুবিধাটা নেয়। যেহেতু জানেন যে তারা মিথ্যা সংবাদ বেশি পরিবেশন করে। আপনারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমি অনুরোধ করব সেভাবে কাজ করেন।’
আরাকান সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের আমাদের দেশে এসে সাংগ্রাই উৎসব পালন করার বিভিন্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আরাকান আর্মি ফাইট করতেছে অনেকদিন যাবত। এদের অনেকে এপারে বিয়ে করে ফেলেছে- এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু যে হারে ভিডিওতে আসছে বিষয়টা তা নয়। টিকটক ভিডিও অনেকভাবে করা যায়। কিন্তু সবটা যে সত্য তা না। আবার সবটা যে মিথ্যা তাও না।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তটা ডিফিকাল্ট। এটার ক্ষেত্রে একটু ব্যালেন্স করতে হবে। । আমরা তো মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। কিন্তু বর্ডারটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। এখন মিয়ানমার থেকে কিছু আমদানি-রপ্তানি করতে হলে মিয়ানমার সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় আবার আরাকান আর্মিতে যারা আছে তারাও পয়সা নিচ্ছে। এখানে একটা সমস্যা আছে আপনাকে বুঝতে হবে। এ সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। সীমান্ত পুরোভাবে রক্ষিত আছে।’
এসময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন ও রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/এমপি
জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) পাহাড় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা