‘রানার হাতে আওয়ামী ক্ষমতা না থাকলে শ্রমিকদের জীবন দিতে হতো না’
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০৭ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১০
ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, সোহেল রানার অপকর্মের মূল কারন ছিল তার রাজনৈতিক ক্ষমতা। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনীতিতে এমনভাবে দুর্বৃত্ত তৈরি করেছিলো যে, সেই দৃর্বৃত্তদের হাতে পড়ে রানা প্লাজার এতোগুলোর শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়েছে। যদি রানাপ্লাজার রানার হাতে আওয়ামী ক্ষমতা না থাকতো, তাহলে সেদিন এভাবে আমাদের শ্রমিক ভাইদের জীবন দিতে হতো না।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘স্মরণ ও সংস্কারে শ্রমিকের বন্দোবস্ত’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘রানাপ্লাজার উদ্ধার কার্যক্রমে বিদেশি সংস্থাগুলো বাংলাদেশে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করবার অনুমতি চাইলো। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার এখানে বিদেশি সংস্থাগুলোকে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধা দিল। তাদেরকে অনুমতি পর্যন্ত দিল না। কারণ শেখ হাসিনার কুচক্র যাতে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রকাশ না পায়।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘এখানে অনেক শ্রমিক আহত অবস্থায় ছিল। কিন্তু সেই মানুষদের উদ্ধারের নাম করে তাদের লাশগুলোকে গুম করার কুচক্র চলছিল। এই এলাকার রানার মত সন্ত্রাসিরা এতোগুলো শ্রমিক ভাইবোনদের হত্যা করে মহোৎসব চালিয়েছিল। এমনকি সাংবাদিক নাজমুল যখন রানাপ্লাজার ঘটনাটি নিয়ে জনগণের কাছে উন্মোচন করেছেন, তখন নাজমুলকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাকে জেলে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।’
রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার যাতে আর ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সোহেল রানাদের মতো গ্যাং যেন বাংলাদেশে তৈরি না হয় সেই শপথ নেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনায় যেসব সন্ত্রাসী শ্রমিকদের অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা কারা, কোন এনজিও প্রতিষ্ঠানের লোক? যে ব্যক্তিই করে থাকুক তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। শ্রমিকদের অনুদানের টাকা শ্রমিকদের মধ্যে ন্যায্যভাবে বণ্টন করতে হবে।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশে নতুন করে রাজনীতির বন্দোবস্ত নির্মাণ করতে চায়। নতুন রাজনীতির বন্দোবস্তে শ্রমিকদের হিস্যা ন্যায্যভাবে আদায় করার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পাশে থেকে শ্রমিকদের হয়ে সবসময় কাজ করে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এনসিপি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার জন্য শ্রমিকদের স্বার্থে শ্রমিক উয়িং গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। আপনাদের কাছে আহ্বান থাকবে দেশের মেহনতি শ্রমিক জনতার পক্ষে কথা বলার জন্য তাদের দাবি-দাওয়াগুলো আদায় করার জন্য অবশ্যই জাতীয় নাগরিক পার্টির শ্রমিক উয়িং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন। আপনাদের বক্তব্যগুলোকে সারা দেশের সকল পর্যায়ের শ্রমিকদের বক্তব্য উপস্থাপনের দায়ভার জাতীয় শ্রমিক পার্টি কাঁধে তুলে নিচ্ছে।’
আখতার আরও বলেন, ‘যারা শ্রমিকদের কর্মস্থলে দূর্বল করে রাখে, শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ যারা দেয় না, কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় পদ-পদবি এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জায়গায় যেন তাদের দেওয়া না হয়।’
তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনায় যারা শহিদ হয়েছেন, সেই শহিদ পরিবার ও যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন সেসব শ্রমিকদেরকে অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদেরকে পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা চিকিৎসা বঞ্চিত অবস্থায় নিঃশেষ হয়ে যায়। আমি এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই স্থাপন করতে হবে।’
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, ‘১ মে জাতীয় শ্রমিক দিবসে সকল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ সব শ্রমিক প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিক পরিবেশগুলো ঠিক করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম ফকির, শ্রমিক উইংয়ের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীরা।
সারাবাংলা/এফএন/এমপি