Thursday 24 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধে সৌদি আরবে বেড়েছে চাপ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩০

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ, সৌদি আরবে বেড়েছে চাপ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: কখনো সিন্ডিকেট, কখনো সরকারের অদূরদর্শিতা, আবার কখনো দক্ষ শ্রমিকের অভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। কখনো জিটুজি, কখনো বিটুবি পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর চুক্তি করেও সিন্ডিকেটের জন্য সেসব উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি।

বিগত সময়ে মালয়েশিয়ায় যারা যেতে পেরেছেন, তাদের অনেকেই হয়েছেন প্রতারিত। চাকরি না পেয়ে মাসের পর মাস মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। অবৈধভাবে বসবাসের কারণে আটক হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে অনেককে দেশেও ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ফের জনশক্তি রফতানিতে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে আগামী মে মাসে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে বাংলাদেশ যে কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানি করে তার মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরেই আসে মালয়েশিয়ার নাম। একসময় দেশটিতে বছরে ১৫ লাখ কর্মীও পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত ১৫/১৬ বছর ধরে দেশটিতে জনশক্তি রফতানি নিয়ে নানা সংকট তৈরি হয়। এই সংকটের মধ্যে ব্যবসায়ীদের একটি অসাধু চক্র সব সময়ই সরব ছিল। সরকারিভাবে এইসব সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা নানা উপায়ে করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার ওপরে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মীর সংকটও শ্রমবাজারটিকে সংকুচিত করেছে। এর পরও নানা চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ১ হাজার ৫৮৭ জন কর্মী গেছেন মালয়েশিয়ায়। যদিও বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি’র তথ্যানুযায়ী, মালয়েশিয়ায় জানুয়ারিতে ১ হাজার ২৮৬ জন আর ফেব্রুয়ারিতে ৩০১ জন কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দেশটিতে বর্তমানে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকায় চাপ বাড়ছে সৌদি আরবের ওপর। দেশটিতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মী কাজ নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৬ হাজার ৬১৮ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ২৫৮ জন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেটসংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ওই সিন্ডিকেটে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ তখনকার প্রভাবশালীরা জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় স্মারকলিপিতে। গত সোমবার (২১ এপ্রিল) দেওয়া স্মারকলিপিতে তাদের দাবি, অতীতের মতো যেন আর সিন্ডিকেট না হয়। সিন্ডিকেট ভাঙতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক সংশোধনের দাবি জানান তারা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূইয়াকে দেওয়া স্মারকলিপিতে তারা আরও লিখেন, সিন্ডিকেট ভাঙলে মাত্র দেড় লাখ টাকায় মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানো সম্ভব। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও ফের সিন্ডিকেট করার পায়তারা চালাচ্ছে একটি চক্র।

এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের চালু করতে মে মাসে বৈঠকে বসতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়ে আমরা প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট তো শুধু এদিক থেকে হয়নি, দুই দিক থেকেই হয়েছে। এবার আমাদের লক্ষ্য সিন্ডিকেটের বাইরে একটি নিরাপদ অভিবাসন শুরু করা। বেসরকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, মানুষ যাতে কম খরচে যেতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব দিতে হবে।’

এ বিষয়ে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো সৌদি আরব ছাড়া কোনো মার্কেট খোলা নেই। আমরা চাই মালয়েশিয়া খুলে যাক। অন্তত একটা শ্রমবাজার খুলুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘কম খরচে যাতে লোকজন যেতে পারে এবং দেশটিতে গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারে- এটিই আমরা চাই।’

এদিকে মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকলেও দেশটিতে ধরপাকড় চলছেই। গত তিন মাসে সাঁড়াশি অভিযানে অবৈধভাবে বসবাস করা ১৯ হাজার ৮৬৭ জনকে আটক করেছে মালেশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চলতি বছরের ২ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৭৯০ জনকে তল্লাশি করা হয়েছে। দেশটির ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩ এর অধীনে বিভিন্ন অপরাধে আটক করা হয় ১৯ হাজার ৩৬১ জনকে। তবে এদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি সে তথ্য জানা যায়নি। একই অভিযানে গত ১৯ এপ্রিল ৫০৬ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে আইনশঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে ১৬৫ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।

মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে বৈধ কাগজপত্র না থাকা, ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া, ওয়ার্কিং ভিজিট পাসের অপব্যাহবারের অভিযোগ রয়েছে। এই আটককৃতদের মধ্যে ৪৫০ জন নিয়োগকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। যারা মিথ্যা আশ্বাসে কর্মী নিয়ে কথা অনুযায়ী কাজ দেননি। এদিকে এরও আগে অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধে সাজা শেষে ৫০ অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া। এর মধ্যে ২২ জন রয়েছেন বাংলাদেশের, ভিয়েতনামের নয় জন, ইন্দোনেশিয়ার নয় জন, পাকিস্তানের ছয় জন এবং দু’জন ভারত ও দু’জন চীনের নাগরিক রয়েছে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) মালয়েশিয়ার জোহরবারু রাজ্যের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দেশটির গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৫০ বিদেশি নাগরিকের সাজা শেষ হওয়ায় ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী কেএলআই ১ ও ২ সেনাই আন্তজার্তিক বিমানবন্দর দিয়ে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ার পেনাল কোড আইন ৫৭৪, বিপজ্জনক ড্রাগস অ্যাক্ট ১৯৫২ আইন ২৩৪ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশনস্ ১৯৬৩ এর বিভিন্ন অপরাধ শেষে দেশটির আইন অনুযায়ী তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে ফেরত পাঠানো হয়।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

চাপ জনশক্তি রফতানি মালয়েশিয়া সৌদি আরব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর