সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে মিনি ‘আয়না ঘর’র সন্ধান মিলেছে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে নির্যাতন, জমি লিখে নেওয়া, চাঁদা আদায় ও কিডনি বিক্রিসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করা হতো বলে অভিযোগ ওঠেছে। সেখান থেকে সুড়ঙ্গ বানিয়ে দুইজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা যায়।
শুক্রবার (২ মে) রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামে এ মিনি ‘আয়না ঘর’ এর সন্ধান পাওয়া যায়।
পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুল জুব্বার (৭৫) ও লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৪৮)।
জানা যায়, দীর্ঘ ৬ মাস বন্দি থাকা দুই ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ওই ঘর থেকে বের হয়। তারা টানা চার-পাঁচদিন ধারালো কাঁচি দিয়ে মেঝে খুঁড়ে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করে বের হন। এরপর তারা পরিবার-পরিজনকে এ লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে ঘটনাস্থলে মিনি ‘আয়নাঘর’ এর সত্যতা পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
কথিত এই আয়নাঘর থেকে মুক্ত হওয়া ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন বলেন, পাঁচ মাস ধরে এখানে বন্দি ছিলাম। একমাস অন্য জায়গায় রেখেছিল। তবে কোথায় রেখেছিল জানি না। মাঝে মধ্যে শরীরে ইনজেকশন দিতো তারা।
কারাবন্দি করেছে আপনাকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পল্লি চিকিৎসক আরাফাত, শরীফ মেম্বার, কামরুল ইসলাম, হাফিজুল, পান্নাসহ আরও তিনজন। তারা মুখোশপরা ছিলেন। বন্দি ঘরে তিনি ছাড়াও আব্দুল জব্বার নামের একজন ছিলেন।
আহত জব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে আমার বাবা নিখোঁজ হন। পরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১২ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। তাতেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কিন্তু গভীর রাতে বাবা ওই আয়না ঘর থেকে কৌশলে বের হয়েছে। তিনি খুব অসুস্থ, আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সোনারাম গ্রামের যে ঘরটি থেকে দুই ব্যক্তি পালিয়েছে, ওই ভবনের মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন শেখ। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ভবনের নিচে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট কক্ষ করে আয়না ঘর বানিয়েছেন পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে পল্লি চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাত। তিনি ও তার কিছু লোকজন গভীর রাতে এ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এখানে আগে থেকেই নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম চলছিল।
রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঘটনার পর থেকেই ঘটনাস্থলে মানুষের প্রচুর ভিড় ছিল। তবে সত্যিকারের ‘আয়না ঘর’ কিনা, তা যাচাই করা হচ্ছে। এরিমধ্যে আরাফাত নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এস.পি) ফারুক হোসেন বলেন, আয়নাঘর কিনা-সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।