Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইএমএফ ঋণ নিয়ে সংশয় ও সম্ভাবনা

ড. মিহির কুমার রায়
১৪ মে ২০২৫ ১৪:৩০

সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট কাটাতে, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এরইমধ্যে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের বেলায়। এরপর ঋণ কর্মসূচির অধীনে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি মূল্যায়ন করতে সংস্থাটির পাঁচটি মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। সদ্য সমাপ্ত মিশনটি বাদে এর আগের চারটি মিশনে কিস্তির অর্থছাড়ে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছিল। তবে এবারই প্রথম অর্থছাড়ের বিষয়ে সমঝোতা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এখানে উল্লেখ্য যে আইএমএফের গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির চতুর্থ রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। মিশন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয় মূলত রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা মধ্যে মতপার্থক্যই এবার সমঝোতা না হওয়ার কারণ। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন করার পথ প্রশস্ত করতে চলতি এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভাসহ সামনে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতার জন্য আলোচনা চলবে। বিদ্যমান এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশ ও তার জনগণকে সহায়তায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের ৫ দশমিক ১ থেকে কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গণ-অভ্যুথানের কারণে অর্থনীতিতে ব্যাঘাত ঘটা, কঠোর নীতি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। গত বছরের জুলাইতে মূল্যস্ফীতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭ শতাংশে ওঠার পর মার্চে কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটি এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫-৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি।’

বিজ্ঞাপন

আইএমএফ এর প্রনিধিদল বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেন-যেমন ১. প্রাধিকারমূলক কর সুবিধা প্রত্যাহার ও কর ব্যবস্থা সহজীকরণের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; ২. মুদ্রানীতির কঠোরতা খুব বেশি দ্রুততার সঙ্গে শিথিল না করাটা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিম্ন মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা অব্যাহত থাকে; ৩. বিনিময় হারকে আরো স্বাধীনভাবে সমন্বয় করার সুযোগ দিলে এটি রফতানিকে প্রতিযোগিতামূলক রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ানো এবং অর্থনীতিতে বাহ্যিক আঘাত থেকে সুরক্ষার জন্য সহায়ক হবে; ৪. বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় কর সংগ্রহের পরিমাণ অত্যন্ত কম। তাই কর ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। কর ব্যবস্থাকে যৌক্তিক, স্বচ্ছ ও দক্ষ হতে হবে। এর মানে হচ্ছে অব্যাহতি হ্রাস, কর সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং কর নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করতে হবে; ৫. ‘আইন-কানুনগুলো বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে এবং সরকারকে দ্রুত নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঠিক করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো স্বাধীন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সংস্কার করতে হবে; ৬. সুশাসন উন্নত করা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর মাধ্যমে আরো বেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব যাতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে এবং তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রফতানি খাতকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে । সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রতিনিধি দল জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলমান এবং সঠিক পথে রয়েছে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আগামী জুনে সিদ্ধান্ত হবে। জুনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

এর পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ৬ এপ্রিল বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ১. বাংলাদেশে কর জাল অনেক কম। এখানে লাখ লাখ শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকে। ভ্যাটের একক হার দেখতে চায় আইএমএফ। কিন্তু আমরা একেবারে একক ভ্যাট হারে যেতে পারব না; ২. ঋণখেলাপি ও ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা আনা, খারাপ ঋণ কীভাবে কমাব, আইন সংশোধন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে; ৩. কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়—এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে; ৪. অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুন মাসে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য এই মিশন অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যালোচনা করবে। মে-জুন মাসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে; ৫. শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়—এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে; দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ে এবারের মিশন রাজস্ব পরিস্থিতি, কর-জিডিপি অনুপাত, বিদেশি মুদ্রার মজুত, বাজেট ঘাটতি—এসব বিষয় পর্যালোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো মনোভাব দেখিয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা জানান; ৬. বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায়, ওদের (আইএমএফ) মূল ফোকাস ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, বাজেটে ঘাটতি কমানো; ৭. আইএমএফের কনসার্ন হলো রেভিনিউ জেনারেশন, আমাদের বাজেট সাইজ কত হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) কত হবে, এগুলো নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ডিটেইল কথা হয়নি, এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে লোন রেজুলেশন নিয়ে, বলেন অর্থ উপদেষ্টা; ৮. সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা, খেলাপির ঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াবো এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে ওরা ইন্ডিভিজুয়ালি বসবে; ৯. চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।

সার্বিক বিশ্লেষনে দেখা যায় যে দেশের অর্থনীতি একটি পরিবর্তনের সময় দিয়ে যাচ্ছে এবং আইএমএফ এর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ একটি আভ্যন্তরীন চাপের সম্নুখীন হবে যা এ মূহুর্তে কাম্য নয়। যেমন বিনিময় হার নিয়ে মতানৈক্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সময় নিতে চাচ্ছে। কিন্তু আইএমএফ চায় শিগগিরই। মিশনের সঙ্গে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক জুন পর্যন্ত সময় নিতে চাচ্ছে। এ মুহূর্তে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ডলারের দর হঠাৎ বেড়ে যায় কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে তাদের। আর ডলারের দর বাড়লে মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স যেভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি উদ্বেগের জায়গা হলো, বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে এখনও ঘাটতি আছে। সর্বশেষ হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ঘাটতি ছিল ১২৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স ভালো থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললে এই ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে চাচ্ছে না। গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের পরামর্শে বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাংকগুলো ডলারের একটি আন্তঃব্যাংক দর নির্ধারণ করত। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে দেওয়া হয়। এতে একটি মধ্যবর্তী রেট থাকে, যা এখন এক ডলার সমান ১১৯ টাকা। এই দর এর চেয়ে আড়াই শতাংশ কমতে বা বাড়তে পারবে। সেই হিসাবে ডলারের দর এখন সর্বোচ্চ ১২২ টাকা হওয়ার কথা। আইএমএফের প্রস্তাব, বিনিময় হার ‘ক্রলিং পেগ’ থেকে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করা। এই প্রস্তাবের প্রায় এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তারা এখন এ বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছে। অনেকেই বলছেএখন রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক ভালো। আমদানি তেমন বাড়ছে না। রপ্তানি খাত থেকে আগের চেয়ে বেশি অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এই পরিস্থিতিতে ডলার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আর বাজারে যদি কেউ অনিয়মের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা নিতে চায়, তাহলে তা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আইএমএফ মূলত চারটি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রাজস্ব খাতে সংস্কার, ভর্তুকি কমানো এবং আর্থিক খাত শক্তিশালী করা। নতুন ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে সরকার রাজি। তবে আগের ভর্তুকির বকেয়া পরিশোধের চাপ থাকায় এ খাতে অর্থ খরচ কমেনি।

আইএমএফের ঋণের কিস্তি কোনো কারণে আটকে গেলে তার প্রভাব হবে বহুমুখী। কেননা, এটি শুধু অর্থের বিষয় নয়। আইএমএফের ঋণের সঙ্গে সার্বিক উন্নয়ন সহযোগিতা এবং দেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে, আইএমএফ মিশন সমঝোতার ঘোষণা দেয়নি বলেই মনে করা উচিত হবে না যে, কিস্তি আটকে যেতে পারে। তবে সমঝোতা হলে ভালো হতো। এখন ওয়াশিংটনে কী আলোচনা হয়, তা দেখার বিষয়।, আইএমএফের ঋণ কোনো কারণে স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেলে অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া মুডিস, ফিচসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলোর রিপোর্টেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করেসপন্ডিং ব্যাংকিংয়ে খরচ বেড়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও ৫ম কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছেএবং গত ৫ই মে তারিখে তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি । বলা হচ্ছে, আইএমএফ দুটি শর্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানে অসন্তুষ্ট। প্রথমটি হলো ডলারের বিনিময় হারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করে ফেলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি নয়। দ্বিতীয়টি হলো সরকারি রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতকে বর্তমান সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সরকারের অনাগ্রহ। ডলারের দামকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করলে ওই বাজারের ম্যানিপুলেটর ও অ্যাগ্রিগ্রেটরদের তাণ্ডবে ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে বাড়তে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তারা এখনই ডলারের দামকে বাজারভিত্তিক করে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো ডলারের দাম নিয়ে সংকট ডেকে আনতে চায় না। পাকিস্তানে এখন ১ ডলারের দাম ২৮০ রুপি এবং শ্রীলঙ্কায় ৪০০ রুপি। এর বিপরীতে বাংলাদেশে ১ ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা গেছে। ২০২৪ সালের ২৭ জুনের পর বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ঋণের কিস্তির টাকা পায়নি। ঋণের অর্থ ব্যতিরেকেই যদি ডলারের দামকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার বাড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেন আইএমএফের এ রকম বিপজ্জনক শর্ত মেনে নেবে ? এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে, বাংলাদেশের এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে আট মাস ধরে অফিশিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স–প্রবাহের প্রবৃদ্ধির ধারার কারণে। সেই ধারা এখনো অক্ষুণ্ন আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর গত ২৬ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পাওয়া গেলেও কোনো ক্ষতি হবে না। দেশের অর্থনীতি যেমন আছে, তেমনই চলবে। বাংলাদেশের লক্ষ্য নিজস্ব আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করা।’ এই দৃঢ়তা খুব শুভ লক্ষণ। এই দৃঢ়তা যেন বাস্তববাদী হয়।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

সারাবাংলা/এএসজি

আইএমএফ ঋণ ড. মিহির কুমার রায় মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর