Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তামাক নয়, চাই সুস্থ জীবন

তানজিদ শুভ্র
৩১ মে ২০২৫ ১৬:৪৩ | আপডেট: ১ জুন ২০২৫ ১৬:৪৬

আজ ৩১ মে, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এই দিনটি প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো পালন করে আসছে। উদ্দেশ্য একটাই তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং এই আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে উৎসাহ দেওয়া।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’। এই বাক্যটি কেবল স্লোগান নয়, বরং এটি আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার এক জরুরি আহ্বান।

তামাকের ভয়াবহতা আজ নতুন কিছু নয়। ধূমপান, জর্দা, গুল এসব পণ্যের ক্ষতি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু অনেক সময় গুরুত্ব দিই না। একজন ব্যক্তি যখন তামাক ব্যবহার করেন, তখন তিনি শুধু নিজের নয়, পরিবারের সবার জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে এই সংখ্যা বছরে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি। অথচ এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য।

তামাক ব্যবহারের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, স্ট্রোকসহ বহু মারাত্মক রোগ হয়। শুধু ধূমপান নয় জর্দা বা গুল ব্যবহার করলেও মুখ ও দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হয়। দাঁতের মাড়ি নষ্ট হয়, মুখে ঘা হয়, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।

এছাড়া একজন ধূমপায়ী যখন প্রকাশ্যে ধূমপান করেন, তখন তার ধোঁয়া আশপাশের মানুষের শরীরেও ক্ষতি করে। এই ‘পরোক্ষ ধূমপান’ বিশেষ করে শিশুদের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু তামাকধোঁয়ার মধ্যে বড় হয়, তাদের হাঁপানি, নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তামাক কেবল স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, এটি অর্থনৈতিকভাবেও একটি পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে। অনেক নিম্নআয়ের মানুষ খুব অল্প উপার্জনের বড় একটি অংশ তামাকে খরচ করে ফেলেন। এই টাকা দিয়ে হয়তো সন্তানের পড়াশোনা, ভালো খাবার বা চিকিৎসা করা যেত কিন্তু সেটি আর হয় না।

অনেকেই বলেন, ‘একটু ধূমপান করলে কীইবা হবে?’ কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। একবার তামাকে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে তা নেশায় পরিণত হয়। তখন ছাড়তে চাইলেও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

বড় বড় তামাক কোম্পানিগুলো অনেক সময় সরাসরি বিজ্ঞাপন না দিলেও অন্যভাবে তাদের পণ্যকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করে। সিনেমা, নাটক, গান, খেলার অনুষ্ঠানে তারা পণ্যের ছদ্মবেশী প্রচারণা চালায়। তরুণদের মাঝে তারা ‘কুল’ বা ‘স্টাইলিশ’ ভাব ছড়াতে চায়।

তরুণরা অনেক সময় না বুঝেই এসব ফাঁদে পা দেয়। তারা ভাবে, ধূমপান মানে সাহস, স্বাধীনতা বা আধুনিকতা। কিন্তু একটু ভাবলেই বোঝা যায় এটা আসলে এক ধরনের ধোঁকা। যেটা দিয়ে একদিকে আমাদের শরীর ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে কোম্পানিগুলো লাভ করছে কোটি কোটি টাকা।

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রথমত, পরিবার থেকেই সচেতনতা শুরু হোক। বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ তামাক ব্যবহার করলে তাকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তামাকবিরোধী আলোচনা, পোস্টার, নাটক ও ক্যাম্পেইন চালানো দরকার। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সামনে ভালো উদাহরণ হোন।

সরকারের পক্ষ থেকেও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। যেমন: সব ধরনের তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে, পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে, তরুণদের জন্য কাউন্সেলিং ও সহায়তা কেন্দ্র চালু করতে হবে প্রভৃতি।

তামাকের অভ্যাস ছাড়াটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। অনেকেই সফলভাবে তামাক ছাড়তে পেরেছেন। প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, সঠিক সহায়তা এবং পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন।

একটি দিনেই পৃথিবী বদলায় না, কিন্তু একটি সচেতন সিদ্ধান্ত আমাদের পরিবার ও সমাজকে ভালো দিকে এগিয়ে দিতে পারে।

তামাক নয়-নির্মল বাতাস, প্রাণভরে বাঁচার অধিকার চাই। আসুন, আমরা নিজেরা তামাক ছাড়ি এবং অন্যকেও উৎসাহ দিই। আগামী প্রজন্ম যেন ধোঁয়ার নয়, সুস্থতার আশীর্বাদ নিয়ে বেড়ে ওঠে সেই বাংলাদেশ গড়াই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এএসজি

তানজিদ শুভ্র তামাক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর