Monday 02 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট বাস্তবায়নের গতিপ্রকৃতি

ড. মিহির কুমার রায়
১ জুন ২০২৫ ১৭:০৩

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং প্রথম প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে মোট ব্যয় হয়েছে ৯৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। টাকা।এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। ওই অর্থবছরে ব্যয় হয়েছিল ৭৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট পরিচালন ব্যয় বা অনুন্নয়ন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। এর পরেই রয়েছে প্রশাসনিক (২৩ দশমিক ৭ শতাংশ) ও সামাজিক খাতে (২০ দশমিক ১ শতাংশ) ব্যয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে, আলোচ্য সময়ে ঋণের সুদ পরিশোধে ৪২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এটি তিন মাসের পরিচালন ব্যয়ের ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষা খাতে ১০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৮ শতাংশ); পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৫ হাজার ৩৪ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ), প্রতিরক্ষা খাতে ৫ হাজার ৩৪ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং স্থানীয় সরকার খাতে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা (বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ) ব্যয় হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধস নেমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। পাচ মাস কেটে গেলেও অনেক মন্ত্রণালয় এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি। বাকিগুলো এডিপির কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড়ে ধীরগতি এবং প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এটি এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাজেটে মূল এডিপিতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ে এডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৩২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৭৬ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা (বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা (বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ১ শতাংশ)। এনবিআর আওতাধীন রাজস্বের মধ্যে আয়কর খাতে ২৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে ৩০ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ও সম্পূরক শুল্ক খাতে ৯ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

অর্থ বিভাগ জানায়, রাজস্ব আদায়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রবৃদ্ধির হার ১৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। চলতি অর্থবছরের এনবিআর আওতাধীন মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এটি গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং আদায়কৃত রাজস্বের তুলনায় ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এদিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংক-বহির্ভূত সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা নিট ঋণ নেয়া হয়েছে এবং ব্যাংক-বহির্ভূত অন্যান্য খাতে ৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে ব্যাংক-বহির্ভূত খাতে তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ২৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ নিয়েছে এবং এ খাতে ২৬ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদি ঋণ পরিশোধ করেছে। অর্থ বিভাগ জানায়, অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক উৎস থেকে ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে এবং ৭ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। বিদেশি ঋণের পরেও আর্থিক চাপ কমবে না ।ঋণদাতাদের কাছ থেকে আরো বেশি বিদেশি ঋণ সংগ্রহ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে দেশের প্রত্যাশিত রাজস্ব আয়ে ঘাটতির কারণে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপ কমবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা রাজনৈতিক পালাবদলের ধাক্কা লেগেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি নেই। এর ফলে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বৈদেশিক সহায়তা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।গত অর্থবছর ছেঁটে ফেলা হয়েছিল ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ। তবে এবার বেশি টাকার বরাদ্দই বাদ দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চাওয়া হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান আছে এমন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়িয়ে ডলার সংগ্রহ বৃদ্ধি করা। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ এবং আগামী ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দের প্রক্ষেপণ দিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে চিঠি দেয় ইআরডি। সেখানে বলা হয়, বৈদেশিক সহায়তাযুক্ত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির ভিত্তিতে বরাদ্দ নির্ধারণ করে ১০ নভেম্বরের মধ্যে বরাদ্দ চাহিদা জমা দিতে হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ জমা দিয়েছে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এতে মনে করা হচ্ছে, এবার বেশি অঙ্কের বরাদ্দ কমতে পারে। ইআরডির একাধিক কর্মর্কতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ ছাড় হতে পারে। এই ঋণ ডলার সংকট মোকাবিলায় সরকারকে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রাজস্ব আদায়ের হার কম থাকায় বিদেশি ঋণ প্রবাহ বাড়লেও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ কমবে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে দেশের রাজস্ব আদায় এক শতাংশ নেতিবাচক ছিল। এই সময়ে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি নির্ধারণী বিভাগকে কার্যনির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।২০০৩ সাল থেকে এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছিল। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এই আলাদা করার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।প্রায় আড়াই বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। এ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধি দল বলেছে, যথাসময়ে মুদ্রানীতির সংকোচন ও এর সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট বাস্তবায়ন না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নজিরবিহীন বন্যার প্রভাবে দীর্ঘদিনের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি হার দুই অঙ্কের ঘর ছাড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোসহ কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। শুল্ককর কমানোসহ কোনো পদক্ষেপ কাজে আসছে না। এর ফলে নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। আইএমএফ এই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির বেশিরভাগটাই সরবরাহ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও আগেই থেকেই বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় দফার প্রভাব ঠেকানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি যথেষ্ট কি না জানতে চাইলে প্রতিনিধি দল প্রধান বলেন, ‘দেশের রাজস্বনীতি মুদ্রানীতিকে সমর্থন করা উচিত এবং বহিঃ স্থিতিশীলতা সমর্থন করার জন্য মুদ্রানীতি কঠোর করা উচিত। তবে একই সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং উন্নয়ন বজায় রাখতে রাজস্ব নীতিতেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’

এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার উপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি জাপানের টোকিওতে এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন আইএমএফের এশিয়া প্রশান্ত বিভাগের উপ-পরিচালক থমাস হেলব্লিং এই পর্যালোচনা তুলে ধরেন ।বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলছে, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ সরবরাহ সংকট হলেও, দ্বিতীয় দফায় আগের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ঘা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, যতটুকু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তা মানুষের মধ্যে আরও বাড়ার শঙ্কা তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর মুদ্রানীতির পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বজায় রাখার জন্য রাজস্ব নীতিতেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আবার এক বছরের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৫৬৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপরীতে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতির অনুপাত কমেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ঝুঁকির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে জিডিপির বিপরীতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে এ অনুপাত এখনো ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। আলোচ্য সময়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে, কমেছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি কমলেও বেড়েছে সরকারি খাতের ঋণের স্থিতি। এদিকে ঋণ পরিশোধের চাপও কমে আসছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন থেকেপাওয়া গেছে, গত জুন পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের ঋণ ৮ হাজার ৩২১ কোটি ডলার এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৫৭ কোটি ডলার। গত বছরের জুনে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৮১১ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ২২৬ কোটি ডলার। গত এক বছরের তুলনায় দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৫৬৮ কোটি ডলার বা ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ২ এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ কমেছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট ঋণের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ সরকারি খাতে এবং বেসরকারি খাতে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আলোচ্য ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ৮ হাজার ৪২ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ৯১৭ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১ হাজার ৪১৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ২৭৯ কোটি এবং বেসরকারি খাতে ১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। সরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কম, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেশি। এটিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখা হয়। বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কম। এটিকে নেতিবাচক হিসাবে দেখা হয়। কারণ, স্বল্পমেয়াদি ঋণ অর্থনীতিতে ঝুঁকির সৃষ্টি করে।মোট বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে চীন থেকে ৩১৩ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্য থেকে ১১০ কোটি ডলার, তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডস থেকে ৯২ কোটি ডলার। এছাড়া হংকং থেকে ৭৯ কোটি, সিঙ্গাপুর থেকে ৫৭ কোটি, জার্মানি থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫১০ কোটি, উৎপাদন খাতে ২০৮ কোটি এবং বাণিজ্য খাতে ১০৯ কোটি ডলার। তবে দেশের মোট জিডিপির বিপরীতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত বেড়েছে। গত বছরের জুনে জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাত ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির তুলনায় ঋণ বেশি বেড়েছে। তবে জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো যথেষ্ট কম। জিডিপির ৫০ শতাংশের মতো বৈদেশিক ঋণকে ঝুঁকিমুক্ত ধরা হয়। এর বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে পুঁজি যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের উদ্যোক্তারা বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগ নিয়েছিলেন ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগ যায়নি। বরং আগের চেয়ে ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার কমেছে। ফলে গত এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ১০৭ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরে নিট পুঁজি হিসাবে বিনিয়োগ গেছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ডলার। আন্তঃকোম্পানির বা এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ কমেছে ৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

সারাবাংলা/এএসজি

ড. মিহির কুমার রায় বাজেট মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর