Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর্থ-সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

মো. কবিরুজ্জামান
১ জুন ২০২৫ ১৮:২৮

বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক গবেষণা দেশের নীতি নির্ধারণ, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যকারিতা মূল্যায়নে এক অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। এই গবেষণার মূল ভিত্তি হলো ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’, আর এই নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহের কাজটি যাদের হাতে ন্যস্ত, তারাই হলেন ‘তথ্য সংগ্রহকারী’ বা ডেটা কালেক্টর। তাদের পেশাদারিত্ব, সততা এবং দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে একটি গবেষণার সাফল্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা। একজন তথ্য সংগ্রহকারী কেবল প্রশ্নপত্রের উত্তর লিপিবদ্ধ করেন না, বরং তিনি গবেষণা দল এবং মাঠপর্যায়ের মানুষের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করেন। বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হওয়ায়, তথ্য সংগ্রহকারীর দায়িত্ব পালনে বিশেষ সংবেদনশীলতা ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। এই প্রবন্ধটি আর্থ-সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহকারীর বহুমুখী দায়িত্ব ও কর্তব্য বিশদভাবে আলোচনা করবে।

বিজ্ঞাপন

একজন তথ্য সংগ্রহকারীর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো ‘গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি ভালোভাবে বোঝা’। তাকে গবেষণার সামগ্রিক লক্ষ্য, কেন এই গবেষণা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে কী ধরনের ফলাফল আশা করা হচ্ছে এবং কোন জনগোষ্ঠীর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। একইসাথে, তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত প্রশ্নপত্র, সাক্ষাৎকার গাইড বা পর্যবেক্ষণ তালিকা সম্পর্কে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। প্রশ্নগুলোর অর্থ, এর পেছনে থাকা উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য উত্তরগুলো কীভাবে রেকর্ড করতে হবে, তা তাকে নির্ভুলভাবে বুঝতে হবে। এটি তাকে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করে। গবেষণার প্রতিটি ধাপের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা এবং প্রয়োজনে প্রশ্ন করে নিজের ধারণা স্পষ্ট করে নেওয়া তথ্য সংগ্রহকারীর জন্য অত্যাবশ্যক। এই পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা তাকে মাঠপর্যায়ে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে।

তথ্য সংগ্রহের আগে ‘অংশগ্রহণকারীর সম্মতি গ্রহণ’ একটি অপরিহার্য নৈতিক ধাপ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সচেতনতার স্তর ভিন্ন হতে পারে, সেখানে অংশগ্রহণকারীকে গবেষণার উদ্দেশ্য, তাদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং ব্যবহারের পদ্ধতি সহজ ও বোধগম্য ভাষায় (বাংলা বা স্থানীয় উপভাষায়) ব্যাখ্যা করতে হবে। তাদের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণে সম্মতি নিতে হবে এবং তাদের যে কোনো সময় গবেষণা থেকে সরে আসার অধিকার আছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। মৌখিক বা লিখিত উভয় প্রকার সম্মতি গ্রহণের পদ্ধতিতেই অংশগ্রহণকারীর সম্পূর্ণ বোঝাপড়া নিশ্চিত করা জরুরি। কোনো প্রকার জোর-জবরদস্তি বা প্রভাব খাটানো চলবে না। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর আত্মসম্মান ও অধিকার রক্ষা করা তথ্য সংগ্রহকারীর মৌলিক দায়িত্বের একটি। বিশেষত, দুর্বল বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তাদের সম্মতি গ্রহণে আরও বেশি সংবেদনশীলতা ও যত্নশীল হওয়া উচিত।

নৈতিকতা বজায় রাখা একজন তথ্য সংগ্রহকারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য গোপন রাখা এবং কোনো অবস্থাতেই তা প্রকাশ না করা তার নৈতিক দায়িত্ব। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল আচরণ করা এবং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় বা লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক মনোভাব প্রদর্শন না করা আবশ্যক। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি প্রচলিত থাকায়, তথ্য সংগ্রহকারীর এই বিষয়ে সচেতন থাকা এবং কোনো প্রকার বিতর্কিত মন্তব্য বা আচরণ পরিহার করা উচিত। সংগৃহীত তথ্যের ‘গোপনীয়তা’ রক্ষা করা একটি পবিত্র দায়িত্ব। বিশেষত, স্বাস্থ্য, আয়, ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য কখনোই তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। গবেষণার শর্ত অনুযায়ী, সংগৃহীত তথ্য শুধুমাত্র গবেষণার উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হবে – এই নিশ্চয়তা অংশগ্রহণকারীকে দিতে হবে এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।

তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা গবেষণার মান নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি। অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তর হুবহু এবং কোনো রকম ব্যাখ্যা বা অনুমান ছাড়া রেকর্ড করতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীকে মনে রাখতে হবে, তিনি কেবল একজন মধ্যস্থতাকারী; তার ব্যক্তিগত মতামত বা ধারণা তথ্যে প্রতিফলিত হতে পারবে না। কোনো প্রশ্ন বাদ দেওয়া, ভুল তথ্য প্রদান করা, বা উত্তর নিজের মতো করে তৈরি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। প্রতিটি উত্তর নির্ভুলভাবে রেকর্ড করা এবং প্রয়োজনে অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে স্পষ্টীকরণ চেয়ে নেওয়া জরুরি। তথ্যের ‘গুণগত মান’ নিশ্চিত করতে প্রতিটি সাক্ষাৎকারের পর তথ্যগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা উচিত। অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ উত্তর থাকলে যত দ্রুত সম্ভব অংশগ্রহণকারীর সাথে যোগাযোগ করে তা সংশোধন করতে হবে। তথ্যের নির্ভুলতা গবেষণার ফলাফলকে সরাসরি প্রভাবিত করে, তাই এই ধাপে কোনো প্রকার আপস করা চলবে না।

নমুনা নির্বাচনের নিয়ম মেনে চলা গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে। গবেষণায় নির্ধারিত নমুনা নির্বাচন পদ্ধতি, যেমন: র‍্যান্ডম, স্তরভিত্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইত্যাদি, সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি কেবল নির্বাচিত ব্যক্তি বা এলাকা থেকেই তথ্য সংগ্রহ করছেন। ভুল ব্যক্তি বা এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করা হলে তা গবেষণার ফলাফলের বৈধতা ও প্রতিনিধিত্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে, যদি নির্বাচিত নমুনাকে খুঁজে পাওয়া না যায় বা তারা অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক হয়, তবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত সুপারভাইজারকে জানাতে হবে। প্রতিটি নমুনার ডেটা সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করা তথ্য সংগ্রহকারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে সম্মান জানানো

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্মান করা বাংলাদেশের মতো বহু-সাংস্কৃতিক দেশে অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। তথ্য সংগ্রহকারীকে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ধর্মীয়, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক রীতিনীতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামাঞ্চলে নারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষ তথ্য সংগ্রহকারীদের বিশেষ সংবেদনশীলতা ও সচেতনতা থাকা জরুরি। শালীন পোশাক পরিধান, স্থানীয় রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং কথোপকথনে উপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করা অংশগ্রহণকারীদের আস্থা অর্জনে সহায়ক। সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা বজায় রেখে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা এবং প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পরিস্থিতিতেই স্থানীয় বিশ্বাস বা প্রথার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা উচিত নয়। এটি শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্বস্তি তৈরি করে না, বরং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করে।

মাঠপর্যায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও প্রতিবেদনীকরণ

মাঠপর্যায়ে কাজ করার সময় বিভিন্ন ধরনের ‘সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ’ দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। ভাষাগত জটিলতা, নিরাপত্তা ঝুঁকি, অংশগ্রহণকারীর অনীহা, বা অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে তথ্য সংগ্রহকারীর উচিত তাৎক্ষণিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক বা গবেষণা টিমকে জানানো। এই ধরনের সমস্যা দ্রুত রিপোর্ট করা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি গবেষণার অগ্রগতি ও সুরক্ষায় সহায়তা করে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যেমন – প্রশ্নপত্র হারিয়ে যাওয়া, ডেটা ডিভাইসের ক্ষতি, বা অংশগ্রহণকারীর সাথে ভুল বোঝাবুঝি – তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট করতে হবে। ‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও বিচক্ষণতা’ বজায় রাখা এবং গবেষণা দলের নির্দেশিকা অনুসরণ করা জরুরি। সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সুপারভাইজারকে সরবরাহ করা তথ্য সংগ্রহকারীর দায়িত্ব।

সংগৃহীত তথ্যের সঠিক সংরক্ষণ ও হস্তান্তর

সংগৃহীত তথ্যের সঠিক সংরক্ষণ ও হস্তান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যদি তথ্য কাগজে সংগ্রহ করা হয়, তবে তা নিরাপদে সংরক্ষণ করতে হবে এবং কোনোভাবে যাতে নষ্ট বা হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি মোবাইল অ্যাপ বা ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয়, তবে তা নির্ভরযোগ্যভাবে সঞ্চয় ও সার্ভারে আপলোড নিশ্চিত করতে হবে। ডেটা ব্যাকআপের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহকারীর সচেতন থাকা উচিত। তথ্য হারানো মানে গবেষণার অপূরণীয় ক্ষতি। সংগৃহীত ডেটা সময় মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে গবেষণা দলের কাছে হস্তান্তর করা আবশ্যক। ডেটা হস্তান্তরের সময় নির্ভুলতা এবং সম্পূর্ণতা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক, যাতে পরবর্তী ডেটা এন্ট্রি ও বিশ্লেষণে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়। ডেটা সুরক্ষা প্রোটোকল মেনে চলা তথ্য সংগ্রহকারীর একটি প্রধান দায়িত্ব।

প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত সভায় অংশগ্রহণ তথ্য সংগ্রহকারীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সহায়ক। তথ্য সংগ্রহের আগে এবং চলাকালীন গবেষণা দল কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ ও ডিব্রিফিং সেশনে উপস্থিত থাকা অপরিহার্য। এই সেশনগুলোতে নতুন তথ্য সংগ্রহের কৌশল শেখা, আগের দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এবং সমস্যা সমাধানের সুযোগ তৈরি হয়। এটি দলের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং তথ্যের মান বজায় রাখতে সহায়ক। নিয়মিতভাবে গবেষণা দলের সাথে যোগাযোগ রাখা, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহকারী নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারেন এবং গবেষণার লক্ষ্য অর্জনে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

আধুনিক গবেষণায় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ট্যাব, স্মার্টফোন, রেকর্ডার বা জিপিএস ডিভাইস ব্যবহৃত হলে সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকারীকে পারদর্শী হতে হবে। প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলো সুরক্ষিত, চার্জকৃত ও কার্যকর অবস্থায় আছে কিনা, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। প্রযুক্তি ব্যবহারে ত্রুটি বা অনভিজ্ঞতা তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ডিজিটাল ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে, অ্যাপ বা সফটওয়্যারের কার্যকারিতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা এবং ডেটা আপলোডের নিয়মাবলী সম্পর্কে অবগত থাকা অত্যাবশ্যক। প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেকে নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং দক্ষতা বাড়াতে হবে।

নিরপেক্ষ ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখা একজন তথ্য সংগ্রহকারীর অপরিহার্য গুণ। তথ্য সংগ্রহের সময় রাজনৈতিক মন্তব্য, ব্যক্তিগত মতামত প্রদান, অংশগ্রহণকারীদের প্রভাবিত করা বা তর্ক-বিতর্কে জড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তাকে সর্বদা পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে এবং গবেষণার উদ্দেশ্য সাধনে মনোযোগী হতে হবে। তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা পক্ষপাতিত্ব যেন তথ্যে কোনোভাবে প্রতিফলিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অংশগ্রহণকারীদের সাথে একটি সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখা এবং তাদের বক্তব্যে কোনো প্রকার আবেগ বা ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া না দেখানো একজন পেশাদার তথ্য সংগ্রহকারীর বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক গবেষণায় একজন তথ্য সংগ্রহকারী কেবল একজন তথ্য সংগ্রাহক নন, তিনি গবেষণার সাফল্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। গবেষণার উদ্দেশ্য বোঝা, অংশগ্রহণকারীর সম্মতি গ্রহণ, নৈতিকতা বজায় রাখা, নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ, নমুনার নিয়ম অনুসরণ, তথ্যের মান নিশ্চিত করা, সামাজিক প্রেক্ষাপটকে সম্মান করা, সমস্যা দ্রুত রিপোর্ট করা, তথ্য সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখা – এই সমস্ত দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করলে একজন তথ্য সংগ্রহকারী নিশ্চিত করতে পারেন যে সংগৃহীত তথ্য নির্ভরযোগ্য, বৈধ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাদের এই নিরলস প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো গবেষণাই তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। তথ্য সংগ্রহকারীদের এই অপরিহার্য ভূমিকার স্বীকৃতি এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত বিনিয়োগ, বাংলাদেশের গবেষণা খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।

লেখক: সহকারি পরিচালক, ফিল্ড অপারেশন, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি), ঢাকা

সারাবাংলা/এএসজি

গবেষণা তথ্য সংগ্রহকারী মুক্তমত মো. কবিরুজ্জামান