Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোরবানি হোক আমাদের অহংকার আর দাম্ভিকতার পতন

‎মো. রাকিব
২ জুন ২০২৫ ১৪:৩৬

‎কোরবানি শব্দটি আরবি কুরবান শব্দ থেকে আগত যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নিকটবর্তী হওয়া। অর্থাৎ মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কোনো প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করাকে কোরবানি বলা যায়। মুসলিম উম্মাহর উপর কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার ‎পিছনে রয়েছে এক চমৎকার আত্মত্যাগের ঘটনা। মুসলিম উম্মাহর আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ছিলেন আল্লাহ তায়ালার খুবই প্রিয় একজন নবী। হযরত ইসমাইল (আঃ) ছিলেন তাঁর প্রিয় সন্তান। একদিন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাঁর প্রিয় বস্তু (সন্তানকে) কুরবানি করছেন। অতঃপর তিনি আল্লাহকে খুশি করার জন্য তাঁর প্রিয় সন্তানকে কুরবানি করার প্রস্তুতি নিলেন। একদম শেষ সময়ে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর উপর খুশি হয়ে একটি দুম্বা প্রেরণ করলেন। তারপর থেকে ঈদুল আযহার দিন এবং তার পরবর্তী দু’দিন (১০-১২ই জিলহজ) কুরবানির ইবাদত পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

‎উপরের পটভূমি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম কোরবানি হচ্ছে একটি ইবাদত যেটি পালন করা হয় সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তবে দুঃখের বিষয়, বর্তমান সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে আমাদের মনে হয় কুরবানি করা হয় শুধুমাত্র পশুর গোশত খাওয়ার জন্য এবং একে অপরকে নিজের প্রভাব দেখানোর জন্য। কুরবানির সময় আসলেই প্রতিযোগিতা লেগে যায়, কার চেয়ে কে বেশি দামের গরু , মহিষ , উট বা ছাগল ক্রয় করলো। এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে বলতে থাকেন আমরা এবার টাকার অভাবে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি গরু নিয়েছি আপনারা কতো দিয়ে নিয়েছেন। অর্থাৎ আমরা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের কথা বাদ দিয়ে বলা যায় দামাদামি আর পশুর আকার নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে থাকি।

‎আপনারা আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, কুরবানি আসলেই অনেক ধনাঢ্য পরিবারের আবার নতুন – নতুন ফ্রীজ ক্রয় করা লাগে শুধুমাত্র গোসত সংরক্ষণের জন্য। অথচ কুরবানির নিয়ম অনুযায়ী, কুরবানি করা পশুর গোশতকে সমান তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের জন্য এবং অবশিষ্ট এক ভাগ অসহায় মানুষদের জন্য। কিন্তু বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাই ভিন্ন চিত্র, আনুষ্ঠানিক ভাবে পশু জবাই করেই শুরু হয় গোসত সংরক্ষণের প্রতিযোগিতা যেখানে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি পাওয়ার বিন্দুমাত্র চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় না। তাছাড়া যত্রতত্র পশুর বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট ফেলে পরিবেশ নষ্ট করার রীতি তো একেবারেই পুরোনো।

পবিত্র ঈদুল আযহায় কুরবানি হওয়া উচিত আমাদের সকল অহংকার, হিংসা- বিদ্বেষ এবং দাম্ভিকতার। কিন্তু তা আর হয় কোথায়? যা হয় শুধুই গোসত খাওয়ার প্রতিযোগিতা। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়ে গেছে কুরবানির ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। কুরবানির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, তাকওয়া অর্জন করা , ত্যাগের মহিমা অর্জন, অসহায়দের সহযোগিতা করা এবং পারস্পরিক সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলা। কিন্তু আমরা যে উদ্দেশ্যে নিয়ে কুরবানি করি এতে সমাজে তৈরি হয় এক চরম বৈষম্যের চিত্র। যেখানে ধনাঢ্য শ্রেণী গোসত খায় আর অসহায় শ্রেণীর মানুষরা থাকে দুঃখের প্রহর গণনায়। গত কোরবানির ঈদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল যেখানে দেখা যাচ্ছিল, একটি বহুতল ভবন থেকে এই সমাজেরই কোনো একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি গোসত ছুঁড়ে মারছেন আর নিচে থাকা অসহায় শ্রেণী সে গোসত নেওয়ার জন্য একজন অপরজনের সাথে হাতাহাতি করছেন।

‎‎আমাদের বর্তমান কুরবানি গুলো কোনো ভাবেই শরিয়ত সম্মত হচ্ছে না। কারণ কুরবানিকে আমরা একটি ঘরোয়া ইবাদতের মতো বানিয়ে ফেলেছি। যার যেমন ইচ্ছে তেমন করে কুরবানি করছি, কোনো রকমের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা ছাড়াই। আসুন আমরা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানি করি। আমরা এমন ভাবে কুরবানি করার চেষ্টা করি, যেখানে সবাই সমান ভাবে কুরবানি স্বাদ স্বাদন করতে পারে। তবেই কুরবানির মাধ্যমে আমাদের ভিতরে থাকা সব হিংসা বিদ্বেষ এবং দাম্ভিকতার পতন ঘটাতে পারবো।

‎লেখক: ‎শিক্ষার্থী, ‎সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

সারাবাংলা/এএসজি

অহংকার কোরবানি দাম্ভিকতা মুক্তমত মো. রাকিব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর