Thursday 05 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাটে টাকা সাবধানে রাখুন

রিয়াজুল হক
৩ জুন ২০২৫ ১৮:৩৩

একটি ঈদ চলে যাবার পর আরেকটি ঈদ আসে কোরবানির ভাবনা নিয়ে। কোরবানির ঈদ মানেই গরু ছাগলের হাট, দরকষাকষি আর টাকাপয়সার লেনদেন। শহর-গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে বসে শত শত পশুরহাট, যেখানে প্রতিদিন লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। এই লেনদেন যতটা সহজ, ততটাই জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে নগদ টাকার ব্যবস্থাপনায়। তাই কোরবানির মৌসুমে ‘পশুরহাটে টাকা সাবধানে রাখুন’, এই পরামর্শটুকু এখন শুধু সতর্কতা নয় বরং প্রয়োজনীয়তা।

আমাদের দেশে এখনো পশুরহাটে লেনদেনের বড় অংশই হয় নগদ টাকায়। অনেক মানুষ লক্ষাধিক টাকা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সরাসরি হাটে যান। অথচ হাটে বেচাকেনার উত্তেজনা, গরমে ঘেমে-নেয়ে অতিষ্ঠ মানুষের ভিড়, বিক্রেতার ডাকে ডাকে হট্টগোল, সব মিলিয়ে চোর-ছিনতাইকারীদের জন্য যেন প্রস্তুত করা মঞ্চ।

বিজ্ঞাপন

শুধু শহরের বড় হাট নয়, মফস্বলের হাটগুলোতেও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার হাটে যাচ্ছেন বা শহরের বাইরে থেকে এসেছেন, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। অজানা জায়গা, অপরিচিত মুখ, আর নিজের টাকার হিসাবের প্রতি সামান্য অসাবধানতা, এ সবের সমন্বয়ে তৈরি হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এবং কিছু কিছু অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর ব্যবহার পশুরহাটে এখনো সীমিত কারণ হাটে থাকা অধিকাংশ বিক্রেতার কাছে এখনো অনলাইন ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট নেই। এছাড়া, মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা, সার্ভার ডাউন বা ট্রানজ্যাকশনের সীমাবদ্ধতা অনেক সময়ই লেনদেনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর বড় গরুর দাম যেখানে লাখ ছাড়িয়ে যায়, সেখানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা অনেক সময়ই কার্যকর নয়।

পশুরহাটে ঝুঁকি অস্বীকার করা যাবে না। তাই ক্রেতারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চললেই অনেকাংশে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

১. কোরবানির পশু কেনার জন্য আমরা অনেকেই একসাথে যাই। হাটের মধ্যে নগদ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে রাখা যেতে পারে।

২. এক জায়গায় পুরো টাকা না রেখে বিভিন্ন পকেট বা ব্যাগে ভাগ করে রাখুন। অনেক সময় চোরেরা লক্ষ্য করে থাকে, কোন পকেট বা ব্যাগটি সবচেয়ে সুরক্ষিত, সেখানেই তারা আঘাত হানে।

৩. হাটে প্রবেশের পর থেকেই আপনার চারপাশ খেয়াল রাখুন। হঠাৎ ধাক্কা লাগা, অপ্রত্যাশিত ভিড় তৈরি হওয়া বা অতিরিক্ত বন্ধুভাবাপন্ন কেউ কাছে এসে কথা বলার চেষ্টা করলে, এসব হতে পারে বিপদের পূর্ব নির্দেশনা।

৪. একা হাটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। পরিচিত এবং বিশ্বস্ত লোকজন সাথে থাকলে বিপদে সহযোগিতা পাওয়া যায়।

৫. হাটে প্রবেশের সময়ই নিকটস্থ পুলিশ ক্যাম্প বা নিরাপত্তা বুথের অবস্থান জেনে রাখুন। কোনো সন্দেহজনক ঘটনা ঘটলে, দেরি না করে তাদের জানান।

শুধু ক্রেতারাই নন, বিক্রেতারাও হাটে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। জাল নোট, ভুয়া বিকাশ/নগদ ট্রানজেকশন,‌ এসব এখন পরিচিত কৌশল। গরু বিক্রি করে হাতে পাওয়া টাকা তাৎক্ষণিক যাচাই না করে রেখে দিলেন, পরে দেখা গেল নোটগুলো সব জাল,‌ এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। বিক্রেতাদেরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন _

১. টাকা হাতে পাওয়ার পর যাচাই করে নিন।

২. হাটে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থাকে। তাদের মাধ্যমে জাল টাকা পরীক্ষা করতে পারেন । কিংবা টাকার পরিমাণ কাউন্টিং মেশিনের মাধ্যমে গণনা করিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।

৩. মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা আসার নিশ্চিত এসএমএস না পাওয়া পর্যন্ত গরু হস্তান্তর করবেন না।

৪. বিক্রির পর টাকা দ্রুত ব্যাংকে জমা দিন কিংবা নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেন।

সাধারণত যেকোনো উৎসবকে ঘিরেই অপরাধীরা সক্রিয় হয়। হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেমন প্রশাসনের কর্তব্য, তেমনি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি। ঈদের আনন্দ হোক নিরাপদ, প্রস্তুতি হোক সাবলীল। গরু কেনা নিয়ে যাতে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা না হয়, সেই চেষ্টাটাই মুখ্য। আমরা যদি নিজেরা একটু সচেতন থাকি, নিজের টাকা-পয়সার ব্যবস্থাপনায় একটু মনোযোগী হই, তবে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

সারাবাংলা/এএসজি

কোরবানি পশুরহাট মুক্তমত রিয়াজুল হক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর