‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’- এ কথার মাঝে জড়িয়ে আছে শত শত প্রাণকে সযত্নে গড়া। বৃক্ষ ও প্রাণী একে অপরের জীবনের সঙ্গে জড়িত। প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ হলো অক্সিজেন, যা বৃক্ষ থেকেই উৎপন্ন ও নির্গত হয়। প্রত্যেক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রাণিজগৎ কার্বন ডাই-অক্সাইড বর্জন করে। যা এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বৃক্ষ সেই দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। বৃক্ষ থেকে পাওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে থাকি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অহরহ বৃক্ষ নিধনের ফলে মানুষ নিজেরই ক্ষতি করে চলেছে। বৃক্ষরোপণের প্রতি মনোযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। বৃক্ষ আমাদের পরিবেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অন্যতম বনজসম্পদ। বৃক্ষের পাতা, ফল ও বীজ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। বৃক্ষ থেকে কাঠ পেয়ে থাকি। প্রাপ্ত কাঠ দিয়ে আমাদের বাড়িঘর ও আসবাব তৈরি করা হয়। আমাদের অতি প্রয়োজনীয় লেখার সামগ্রীও বৃক্ষের কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয়। বৃক্ষ পরিবেশের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে।
বৃক্ষ শুধু প্রাকৃতিক শোভাই বাড়ায় না বরং মাটির ক্ষয় রোধ করে। বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। জীবজগৎকে ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বৃক্ষ। উদ্ভিদের অভাবে বৃষ্টিপাতেরও তারতম্য দেখা দেয়। তবে, একদিকে বৃক্ষ যখন ধ্বংস করা হলেও, অন্যদিকে তখন নতুন বৃক্ষের সৃষ্টি করা হয়।
বৃক্ষরোপণ অনেক পরিবেশগত সমস্যা যেমন বন উজাড়, মাটির ক্ষয়, আধা-শুষ্ক এলাকায় মরুকরণ , গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং তাই পরিবেশের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য বৃদ্ধির মতো অনেকগুলি পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলা করে। গাছ ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে যার ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।
পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হলো বৃক্ষ। তাই বৃক্ষ ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের দূষণ রোধ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে থাকে। অথচ নগরায়ণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর যন্ত্র-প্রযুক্তির মোহে অযাচিতভাবে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বাড়ছে উষ্ণায়ন আর মানবসভ্যতা পড়ছে হুমকির মুখে।
নগরজীবনে উখিত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মানুষকে জটিল রোগের শিকার করে তুলছে। বৃক্ষ অনায়াসে এই বিষকে কণ্ঠে ধারণ করতে পারে, কিন্তু আমরা পারি না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন যেটা বৃক্ষই দিতে পারে। বায়ুর দূষণরোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি দূষণরোধে সক্ষম না হলে নগরজীবন দুরারোগ্য ব্যধিতে ছেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়। অন্যদিকে পৃথিবীতে দেখা দেবে, বিপুল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই আমাদের এখন থেকে সচেতন হওয়া জরুরি। জীবনকে সুন্দর ও সুস্থরূপে উপভোগ করতে হলে বৃক্ষের শ্যামল স্নিগ্ধ আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। শুধু কাব্যিক বিলাস নয়, নিতান্ত বাস্তব প্রয়োজনেই বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব রয়েছে। যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সবার আগে। কেননা প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপেক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বৃক্ষহীন পরিবেশ জীবন ও জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বিভিন্ন প্রকার শিল্পের উপকরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সীমাহীন প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বৃক্ষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। তাই দিন যতই যাচ্ছে বন ততই কমছে। তুলনায় সে পরিমাণে গাছ লাগানো হয় না। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে বসেছে। মানুষের বসতি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিদিন অগণিত বৃক্ষ-ছেদন করা হচ্ছে। এক একটি শহর হয়ে উঠেছে পাষাণপুরীতে পরিণত। কল-কারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আকাশ-বাতাস যেনো ধ্বংসে ঘেরা।
তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে গাছ লাগাই। এতে আমাদের বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশও সুন্দর থাকবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ