হাওরের ‘খাদ্যনিরাপত্তার পাহারাদার’ ও ব্যবস্থাপনার সংকট
৬ মে ২০২০ ১৪:০৮
একে তো করোনা বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলে হাওরের বোরো ধান কৃষকের ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। তার ওপর কৃষি মন্ত্রণালয় মোবাইল অ্যাপে ২২টি জেলার ২২টি উপজেলায় ধান কেনার যে অনুমোদন দিয়েছে, তাতে সাতটি জেলার হাওর অধ্যুষিত অন্তত ৩২টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার পরিণতিকে চাষীরা ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া বলছেন। কেননা, ইতোমধ্যে বাধ্য হয়ে কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে লোকসানে ধান বেচতে বাধ্য হচ্ছেন।
অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, সারাদেশে চলতি বছর বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাওরেই ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগ জোগান দেয় হাওরাঞ্চল। ফসলি হাওর থেকে সরকারিভাবে এখন কতভাগ ধান কেনা হয় সেটি যেমন, তেমনি উৎপাদন খরচের বিপরীতে লাভে ফড়িয়াদের কাছে ধান বেচতে পারে কিনা দেখা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
বৈশ্বিক করোনার অভিঘাতে উদ্ভব অর্থনৈতিক মহামন্দার সাথে আগামী দিনগুলোতে খেয়ে বেঁচে থাকাটাই দায় হবে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ভয়াবহ বিশ্বমন্দা এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এমনি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাতে মুষড়ে পড়েছে বাংলাদেশ। কেননা, বাংলাদেশ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সংস্থাটির পক্ষে সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী জুন থেকে আগস্ট- এই সময়ে কৃষি বিপদের প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে।
এখন বোরো ধানের পিকটাইম। স্বভাবতই দৃষ্টি তাই বোরোর উর্বরক্ষেত্র বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের দিকে। কিন্তু বিশ্ব মন্দাকালে খাদ্যভান্ডার খ্যাত হাওরাঞ্চলে একমাত্র বোরো ধান ঘরে তোলার পালা চললেও বৈরি আবহাওয়ার তাড়ায় কাটা খাচ্ছে কাঁচা আধাপাকা ধান। কৃষি শ্রমিকের স্বল্পতায় দেরিতে ও ধীর গতিতে। এমন মোক্ষম সময়ে নির্বিঘ্নে ধান কাটা, ঘরে তোলা ও বিপণন নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়া প্রায় ২৪ লাখ কৃষকের কষ্টের বোঝা কমছে না।
করোনায় কৃষি শ্রমিক বা দাওয়াল সংকটের সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলে সৃষ্ট বহুমাত্রিক সীমাহীন এ দুর্ভোগ বহুলাংশে লাঘব হলেও সংকটের মাত্রা পিছু ছাড়ছে না। চৈত্রের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চলা এ দুর্ভোগে ভিআইপি খ্যাতদের আদিখ্যেতা ও ফটোশুটে পাকা ধানে মই দেওয়া হচ্ছে এবং সদ্য বাদ পড়েছে মোবাইল অ্যাপে ধান বেচা থেকে। এখানে স্কেপগোট বা বলির পাঁঠায় পরিণত হওয়া অসহায় কৃষকেরা চাচ্ছে দুর্ভোগের মধ্যে সেই নয়া আপদ বিদায় হোক। ক্রয় বণ্টন ন্যায্যতাও কায়েম হোক।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বোরো আবাদ হলেও মৌসুমের প্রথমেই ধান পাকে হাওরে। এ সময় বেকার বসে থাকা ওই এলাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকরা ধান কাটতে হাওরে আসলেও এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় ও লকডাউনের ঝক্কিঝামেলায় উপস্থিতি হয় বেশ দেরিতে। তাও নানান শঙ্কায় সেরকম প্রাণবন্তও নয়। করোনা ভয় স্থানীয় দাওয়ালের মনেও। আবহাওয়ার যা অবস্থা তাতে শেষ ভালোর অপেক্ষায় সময় গুনছে কৃষক।
এ নিয়ে কৃষি মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক নিজেও নাকি চিন্তিত। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, হাওরের বোরো ধান যদি না কাটতে পারি তাহলে বিপর্যয় হবে আমাদের। তবে অতিসম্প্রতি সুনামগঞ্জ সফরে এসে আশংকা ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ উদ্বেগ অমূলক নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এবার হাওরের সাত জেলায় কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই হয়েছে ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু তা যথাসময়ে কাটা ও ঘরে তোলা নিয়ে বিড়ম্বনা কাটেনি।
হাওর প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। ইতোমধ্যে মেঘালয়, আসাম ও হাওরাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে দ্রুত ধান কাটার তাগিদ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। করোনা ও বোরো সামলানোতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনও রয়েছে চাপে। তারা দাওয়ালদের দেখভাল এবং কোথাও কোথাও উপজেলা পরিষদ ও সরকার দলীয় নেতাদের নিয়ে উদ্বুদ্ধসহ সরবরাহ করা হচ্ছে ইফতার ও পানীয়।
হাওরে বিশেষ করে বোরো ধান উঠার প্রাক্কালে অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখীর ঝড়-তুফান ও নদী নাব্যতায় আগাম বন্যা অন্যতম। পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণে হাওর রক্ষা বাঁধ ভাঙা তো রয়েছেই। এর যে কোনো একটিই পারে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন নিমিষেই ভাসিয়ে নিতে। উল্লখ্য, শুধু আগাম বন্যায় প্রতিবছর ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরের মতো জমির ফসল। যে কারণে তাড়াহুড়োতে অনেক ক্ষেত্রে আধাপাকা ধানই কেটে ফেলা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, এর ক্ষতিটা ধরা পড়বে ওজনে গিয়ে।
কৃষিমন্ত্রীর উদ্বিগ্নের অন্ত নেই বলা হলেও কাটা-মাড়াই নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত যন্ত্র এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ত্রাণ ও প্রণোদনা দিয়ে হলেও কৃষিশ্রমিক সময় মতো মাঠে নামানোতে নির্লিপ্ততাই পরিলক্ষিত হয়েছে। যদিও দাবি করা হয়েছে সুনামগঞ্জে ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে গেছে।এতে ৩ লাখ ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। কিন্তু সুনামগঞ্জের ৯৫ টি হাওরের বিচারে বাকি ছয়টি জেলার আরও ২৮৭ টি হাওরের চিত্র সেরুপ নয়। এছাড়া পানিতে তলিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে কাঁচা-আধাপাকা বা কাষ্টি ধান কেটে ফেলা হচ্ছে।
একইভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের ধান কাটতে ক্ষেতে পাঠানো হচ্ছে! মহিলা নেত্রী, থানা-পুলিশ, প্রশাসন পর্যন্ত কাঁচি হাতে নেমে পড়েছে! অথচ কৃষি শ্রমিকদের অনুপ্রেরণা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পর্যাপ্ত ত্রাণ ও কৃষি শ্রমিক প্রণোদনা দিয়ে শ্রমিক সংগ্রহের আগাম ব্যবস্থা না করে দলীয় লোক মাঠে নামিয়ে খাদ্যনিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী কৃষকদের মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে লোকদেখানোর অনুযোগ ওঠে গেছে। এতে ভাল অর্জনগুলোও ভূলুণ্ঠিত হয়ে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ পাচ্ছে।
বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল বিশ্বজুড়ে করোনাক্রান্তিকালে চলমান কৃষি শ্রমিক সংকটে দলীয় লোকেরা যেন অসহায় কৃষকের পাশে দাঁড়ায়। স্বেচ্ছাশ্রমে নিষ্ঠার সাথে পাকা ধান কেটে দিয়ে কৃষকের দুর্দশা লাঘব করা হয়। কিন্তু আদুরী হতে নাম জাহিরের মহড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃষকের সমস্যা আরো বাড়িয়ে ক্ষেতেই পাকা ধানের মাড়া লাগিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফেসবুকে ভাসছে বিলাসী শ্রমিকদের কায়িক ছবি। তাদের কতজন কত চিমটি ধান কৃষকের গোলায় তুলে দিতে পেরেছেন হাওরের বোরো ধান দেশের প্রায় তিন ভাগের দুভাগ চালের জোগান দেয়। হাওরের দুকোটি মানুষের খাদ্য জোগানোসহ দেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ খাদ্য জোগানদাতা হাওরের এ কৃষকরা। এরাই খাদ্যনিরাপত্তার পাহারাদার। দেশকে করছেন প্রধান খাদ্যে স্বনির্ভর। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে দেশটির সবচেয়ে বড় অর্জনের দাবিদার তারাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একমাত্র কৃষিই পারে দেশকে দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচাতে। এ ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের না জানার কথা ছিল না যে এ সময় হাওরে বোরোতে পিকটাইম। যথাসময়ে পর্যাপ্ত যন্ত্র সরবরাহ, সর্বোপরি কৃষি শ্রমিকদের ধান কাটায় সম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। হাওরের শ্রম শহরে চলে যাওয়ায় হাওরে কৃষি শ্রমিক সংকট চলছে দু’যুগ ধরে। উত্তরণে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো দীর্ঘকালের ব্যবধানেও উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। ফলে সমস্যা বুমেরাং হয়ে বেশি পুড়ে হাতে লেগে গেছে।
এ কাজে এখনো জনপ্রতিনিধিদের কৃষকদের সাথে সর্বাত্মক আন্তরিক সহযোগিতা ও সরকারের নিবিড় তদারকিই অনেকটা পারে বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থার ধস রুখে দিতে। এখানে চেক অ্যন্ড ব্যালেন্স একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কেবল। কেননা এ ফসলই কৃষকের সারা বছরের সম্বলই শুধু নয়, সারাবাংলার সহায়। এছাড়া মাঠে রয়েছে ভুট্টা, আলু, বাদামসহ অন্যসব ফসলও।
মৌসুমের শুরুতেই ক্ষেত কাটতে বা দাইতে দাওয়াল মোটেই যখন ছিল না, তখন বাংলাদেশ কৃষক লীগের উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিপুত্র কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বঙ্গভবন ফেলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং সুনামগঞ্জে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে পাকা ধান কেটে কৃষকের পাশে চলমান থাকার এ মানবিক প্রয়াসকে কৃষক ও সাধারণরা শ্রদ্ধার চোখে দেখছেন।
এছাড়া পৌনে চারশর মতো হাওরের বেশকিছু জায়গায় সামাজিক, দলীয়, প্রশাসনিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ-অংশগ্রহণেও ধান কাটা বা দাওয়া চলছে। করোনা ক্রান্তিকালে তা মহতী উদ্যোগ যদিও, কিন্তু এ কাজে অনভ্যস্ত ও অনভিজ্ঞ থাকায় দাওয়া বা কাটা সেভাবে এগোচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধান আধাকাটা ও নষ্ট হচ্ছে। ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে এক মুড়িতে দশজন কাড়াকাড়ি করে পাকা ধানে মই দেওয়ায় কপাল পুড়ছে কৃষকদের। সব হারানোর চেয়ে অল্পে তুষ্ট কৃষকের পুরোপুরি কেষ্ট মিলছে না কাটা নির্বিঘ্ন না হওয়ায় ও বিরুপ আবহাওয়ার দরুন। কাটা ধান খলাতেই জমে থাকছে। মাড়াই, সিদ্ধ, শুকানো, উড়ানো, ঘরে তোলা ও বাজারজাতকরণের বিড়ম্বনা এখনো ফুরোয়নি।
কৃষক জানায়, আগাম বন্যার ভয়ে আধা পাকা ধানই কাটতে হচ্ছে। এখানে কেবল ধান কাটাই শেষ কথা নয়। দূরবর্তী হাওর থেকে ধান বাড়িতে আনতে হয়। এরপর মাড়াই, রোদে শুকানো, বাতাসে উড়ানো, খাবারের জন্য সিদ্ধ করা, গোলায় তোলা ও বাজারজাত করা পর্যন্ত অনেক লোকের দরকার। এছাড়া খড় শুকানো ও সংরক্ষণ তো আছেই। এগুলোতে ব্যাঘাত ঘটছে, কারন রোজিন্দায়, ষান্মাসিক ও বৈশাখী কাজের জন্য রাখা কামলা বা মুনি করোনার সুযোগে উচ্চ মজুরি চাচ্ছে।
এবারের বোরো ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রাও ঘোষণা করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সংগ্রহমূল্য গতবারের সমান রেখে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৪ লাখ টন ধান-চালের বিপরীতে কৃষকের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। ২৬ টাকা কেজি দরে ৮ লাখ টন ধান ও ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি। যা উৎপাদনের ৭-৮ ভাগ মাত্র। বাকি ধান কৃষকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক মূল্যে কেনার সুযোগ পাচ্ছে ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীরা। এরইমধ্যে ঋণগ্রস্ত বর্গা চাষীরা ঋণ ও কর্জ পরিশোধে এবং বিভিন্ন দেনা ও খরচ মেটাতে ধানে জাতবেধে, এলাকা ও ক্ষেত্র বিশেষে ৫৫০-৮০০ টাকাতে ফড়িয়াদের কাছে বেচতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে। ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে, সংগ্রহ শেষ হবে ৩১ আগস্ট। কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি বোরো মৌসুমে ২২টি উপজেলায় ডিজিটাল খাদ্যশস্য সংগ্রহ ব্যস্থাপনা ও কৃষকের অ্যাপ এর মাধ্যমে সংগ্রহের অনুমোদন দেয়। যাতে সাতটি জেলার অন্তত ৩২টি হাওর উপজেলার কোনো নাম নেই। হাওরের চারটি জেলা সদরের নাম রয়েছে শুধু। কৃষকেরা এটাকে ধানের জায়গাতে ধুন বা নজর নেই মন্তব্য করে শুকনা পুষ্কনিতে ছিপ বাওয়া বলছেন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন ছিল সাড়ে চব্বিশ টাকা। এবার সরকারি পর্যায়ে ধানের দাম ২৬ টাকা কেজি, যা গতবারের সমান।
কৃষকেরা বলছেন, এবার বোরো ধান উৎপাদন খরচ পড়েছে ২৫ টাকার ওপরে। সরকার কিনছে ২৬ টাকাতে। আর আমরা ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করি মাত্র ১৫-১৮ টাকা কেজি। আর দেশের মানুষ চাল কিনে খায় ৫০ টাকা কেজি। মইধ্যে ৩২-৩৫ টাকা হাত থেইক্কা নাই। তাই ফরিয়াদ- আমরা খাইয়া পিন্ধা বাঁইচ্চা থাকতাম চায়। কৃষি মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বর্তমান পরিস্থতির কারণে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাঁদের সহায়তার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান। কৃষক চায়, কৃষিবীমাসহ উৎপাদন খরচ স্বল্পতা ও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের পাশাপাশি উৎপাদনমুখী আর্থিক সুরক্ষা।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়