Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করেছেন শেখ মো. আব্দুল্লাহ


১৪ জুন ২০২০ ১৪:১৪

১৩ জুন সকাল পৌনে ১১ টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যান। রাজনীতির মাঠে বিষাদের সুর বেজে ওঠে। আর নাসিমের মৃত্যুর ১২ ঘন্টা পর এই বিষাদের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর অকাল মৃত্যু। শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বিজ্ঞাপন

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া পড়েছে। এদিকে প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “শেখ মো. আবদুল্লাহর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট ক্ষতি। তার মৃত্যুতে দেশ একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক নেতাকে হারাল।” শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

বিজ্ঞাপন

আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মো: মতিউর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। ১৯৬১ সালে একই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জড়িত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য ও পরবর্তিতে উক্ত বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।

আবদুল্লাহ ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সে সময় যুবলীগে যোগদান করে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার সবকটি সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করেন।

আবদুল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আবদুল্লাহ এ আসনে শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের সাথে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলসমূহের সম্পর্কন্নোয়ন এবং কওমি মাদরাসার সনদ স্বীকৃতির পেছনে ভূমিকা পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

শেখ মো. আব্দুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শাহাদাতবরণ করলে দেশ এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জীবনে এক দুর্দিন উপনীত হয়। এসময় গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে শেখ মো. আব্দুল্লাহ লোভ-লালসা, ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে অকুতোভয় সৈনিকের ভূমিকা নিয়ে আপসহীনভাবে দলের প্রতি অনুগত থাকেন এবং দলের নিবেদিত কর্মী-সমর্থকদের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ আব্দুল্লাহ তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন করেন।

শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। রাজনীতিতে তার ক্ষতি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। কারণ তিনি দলের জন্য নিবেদিত একজন সৈনিক ছিলেন। তার কাছে সবসময় ব্যক্তির চেয়ে দলের চাওয়ার প্রাধান্য ছিল। তিনি দলের দায়িত্বে কখনো অবহেলা করেননি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সারাজীবন রাজনীতি করেছেন। একই সাথে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার অবদান কখনো ভুলবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রত্যেক কর্মী শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরণ করবে।

লেখক- সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর