Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পৃথিবী কি শান্তির পথে চলছে?


১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৫১

বর্তমান অস্থির বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হলেও মাঝে-মধ্যেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে কোনো দেশ বা অঞ্চল। মূলত নিজের আধিপত্য জানান দিতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর আলোচনার মাধ্যমে আপাতত ভারত ও চীন সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। তবে কতদিন তা থাকবে বলা যায় না। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত,বাহরাইনের সঙ্গে ইসরাইলের ঐতিহাসিক চুক্তি ওই অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ভোর বলে উল্লেখ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের একটি সফলতা। কিন্তু এসব সহাবস্থানের ঘটনা যে সবার কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা পাবে তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং কেউ তার নিজ অবস্থান থেকে সরে আসতে সম্মত নয়।

বিশ্ব এক মহা-সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে ঐক্যমত অত্যন্ত জরুরি, তা সত্ত্বেও বিশ্বে অস্থিরতা বিরাজ করছে। করোনা মহামারির চেয়ে বিশ্বে ক্ষমতার প্রয়োগের মহামারি মানুষের ধ্বংসের জন্য বেশি দায়ী। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। এক সময় তা কার্যকরভাবে মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হবে। তবে মানুষের মনে যে অশান্তির বীজ রোপিত হয়েছে তা থেকে মানুষ কি কোনো দিন বেরিয়ে আসতে পারবে? তা করতে হলে নিজেকে নিজের জায়গা থেকে একটু সরে আসতে হবে। আর শক্তিমত্তা দেখাতে প্রমত্ত মানুষ তা কোনোদিনই করবে বলে মনে হয় না।

সামরিক খাতে নতুন নতুন অস্ত্র যোগ করা এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা এখন প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের প্রবণতা। প্রত্যেকেই যার যার মতো করে নিজের সুরক্ষায় ব্যস্ত। এক্ষেত্রে কোনো দেশই পিছিয়ে থাকতে চাইছে না। প্রতিটি দেশেরই বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার থেকেই নিজেকে সুরক্ষার প্রচেষ্টা করে। দুর্বল বা সবল কোনো দেশ এক্ষেত্রে ছাড় দিতে রাজি নয়। প্রয়োজনে মিত্রদেশের সাথে জোটভুক্ত হয়েও নিজেকে সুরক্ষা দিতে ব্যস্ত।

দেশগুলো নিজেদের খরচ করা অর্থের একটি বড় অংশই অস্ত্র প্রতিযোগিতার পেছনে খরচ করছে। বহু দেশের সামরিক খাতের ব্যয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু কেন এই প্রতিযোগিতা? আমরা কার কাছ থেকে নিরাপদে থাকতে চাইছি? আমাদের প্রধান শত্রু কে? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা আবশ্যক। সময় এসেছে আমাদের আত্ম-বিশ্লেষণ করার। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা বা অন্যকে ভয় দেখানো যদি আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি বলেই আমার মনে হয়।

পৃথিবীর অস্তিত্বই যদি হুমকির সম্মুখীন হয় তাহলে নিজেকে সুরক্ষিত করার কোনো অর্থ হয় না। আজকের যে আক্রমণাত্মক প্রবণতা তা অতীতেও ছিল। যখন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হতো আর উলুখাগড়ার প্রাণ যেতো। তারাও তাদের শক্তিমত্তা জানান দিতে প্রায়ই অন্যদেশ আক্রমণ করতো। যুদ্ধের নতুন নতুন কৌশল বের করতো। নতুন নতুন অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতো। মানুষকে মারার জন্য মানুষের এত কৌশল! সে সময়ও ছোট ছোট রাজ্যগুলো একজোট হয়ে বড় রাজ্যকে প্রতিহত করতো। সেই কৌশলের আজও কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হয়েছে রণক্ষেত্রের। মানুষের এসব কাজের দ্বারা, অস্ত্রের দ্বারা মানুষের কী উপকার হয়েছে? মানব জাতি আজ অস্তিত্ব সংকটে।

যে শ্রম, অর্থ কাজে লাগিয়ে মানুষ বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন করেছে মানুষ তা কেবল ক্ষমতা জাহির করার জন্য করেছে। মানুষকে বিসর্জন দিতে হয়েছে মানবতা। আজ সারা বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রূপ দেখা দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যদি আরও কোনো বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তাহলে এই পৃথিবী নামক গ্রহ আর টিকবে কি না সন্দেহ। যদি পৃথিবীই না থাকে তাহলে যুদ্ধে জয়-পরাজয় দিয়ে কী লাভ। অস্ত্র প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্যই হলো স্থল, আকাশ ও নৌপথে নিজের দেশকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখা। নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করা। অন্য দেশের ওপর খবরদারি করা। এসব মানবজাতির জন্য হুমকি হলেও মূলত কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কেউ এটা মনে করছে না যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। নিজেকে রক্ষার এই কৌশল একদিন বুমেরাং হবে। সবাই সবাইকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত। ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের মধ্যে পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমার কথা বলা হয়। এসব প্রতিটি অস্ত্রই মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। যুদ্ধ যুদ্ধ মনোভাব নিজেদের ভেতর জিইয়ে রেখে আমরা যে মারাত্মক বোকামি করছি তা এই মুহূর্তে বুঝতে পারছি না।

যুদ্ধ এবং শান্তি পরস্পর বিপরীতমুখী প্রক্রিয়া। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বর্তমান বিশ্বে দুটি বিষয়ই পাশাপাশি চলছে। একদিকে একে অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছুড়ছে, অন্যদিকে শান্তির বুলি। মানুষ আসলে কী চায় তা মনে হয় নিজেও জানে না। যুদ্ধ না শান্তি? অস্ত্র না মানবতা? এসব তো পাশাপাশি চলতে পারে না। প্রত্যেকে সামরিক সক্ষমতা বাড়াতেই ব্যস্ত। এশিয়ায় শক্তিমত্তা বাড়িয়ে চলেছে চীন ও ভারত।

এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলায় শি জিনপিংয়ের মেয়াদকালের শুরু থেকেই সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে শুরু করে চীন। তাহলে বিশ্বের পরিণতি কী হবে? আমরা কি নিজেদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজদেরই হারিয়ে ফেলবো? মানুষ সত্যিই কত বোকা! যখন পৃথিবীর অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন ওঠে তখন কেবল নিজেকে রক্ষা করার জন্য বা বিপদমুক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্রে অর্থ ব্যয় করছি। এর থেকে অনেক বেশি জরুরি পৃথিবী বসবাসযোগ্য করা।

পৃথিবীতে বহু মানুষ আজ আশ্রয়হীন, তারা খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগছে। বহু শিশু তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলো পুনর্গঠন করা জরুরি। তারপরেও মানুষের অস্ত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অস্ত্রের জন্ম হচ্ছে। বিশ্ব এখন প্রবেশ করেছে হাইপারসনিক যুগে। সম্প্রতি ভারতও এ খাতায় নাম লিখিয়েছে। কিন্তু পৃথিবী আজ যেসব কারণে হুমকি তা ঠেকানোর মতো কোনো অস্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। এখনও বহু রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এখনও ক্ষুধা দূরীকরণ নিশ্চিত করার স্বপ্ন বহুদূর।

কথা হলো নগর যদি পুড়ে যায় তাহলে দেবালয় কি বাঁচানো যায়। অস্ত্র প্রতিযোগিতা পৃথিবীকে একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাহলে শান্তির কী হবে? ধ্বংস দিয়ে শান্তি আনা যায় না। শান্তির জন্য ক্ষমতার বাতাবরণ ভেদ করতে জানতে হয়। এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তা আর কোনোদিন হবে বলে মনে হয় না।

লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক

বিশ্ব শান্তি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর