ক্যাম্পাস আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:০৯
করোনাভাইরাসের প্রভাবে মার্চের পর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও খোলেনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এভাবে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে ’বোরিং’ সময় কাটাচ্ছে। আর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোও তারা মিস করছে।
মানুষের জীবনের মধুর সময় বলা হয় ছাত্র জীবনকে। আর ছাত্র জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়টাকে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে অনেক কষ্ট, ত্যাগের পরে অর্জন করে নিতে হয় নিজের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন। কারও ঠিকানা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কারও ঠিকানা হয় প্রাচ্যের কেমব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো ঠিকানা হয় সাংস্কৃতিক নগর সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কারো ঠিকানা হয় বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
ক্যাম্পাসে প্রথম কয়েক দিন ক্লাস করেই তৈরি হয়ে যায় বন্ধুদের এক বিশাল সার্কেল। হঠাৎ করেই কিছু অচেনা-অজানা মুখ হয়ে যায় সবচেয়ে আপনজন। যাদের সাথে কাটে জীবনের অনেক সময়। সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে পাশে থাকে তারা।
একটি ক্যাম্পাস প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ আর ভালোবাসার জায়গা। ক্যাম্পাস জুড়ে থাকে কত শত স্মৃতি আর ভালোবাসা। পড়াশোনা, আড্ডা, গানবাজনা, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাট্টা-হাসি, দুষ্টামি আর খুনসুটি। কত শত স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্ত আছে ক্যাম্পাস জুড়ে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবন জুড়ে আনন্দের সিংহভাগ থাকে ক্যাম্পাস জীবনে। কিন্তু হঠাৎ করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। আর সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বস্তরের মানুষের অন্তরে। কোথায় এর শেষ- জানা নেই কারও। আর সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে ৫৫ একরের বিস্তৃত প্রিয় ক্যাম্পাসের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রতি মায়া ও ভালোবাসার টান। নিস্তব্ধ পৃথিবীর সবকিছু। নেই কোনো আগের মতো রূপ। সব যেন অচলাবস্থায়। কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাসটি? এ প্রশ্ন যেন মনের অন্তরালে ঘুরপাক খাচ্ছে বেলা-অবেলায়। প্রিয় ক্যাম্পাসের সব স্মৃতি যেন সবাইকে কাতর করে তুলছে।
মন হারিয়ে যায়, ক্যাম্পাসের লেকপার, জয়বাংলা চত্বর কিংবা ক্যাম্পাসের মাঠের আড্ডায়। এই স্থানগুলোতে এখন তো আর কেউ ভিড় জমায় না। ক্যাম্পাসে প্রথমে গিয়ে বন্ধুদের নিয়ে টঙের দোকানে চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠা, আই প্লাস ওয়ান চত্বরে ফুচকা-চটপটি খাওয়া। ক্লাস শেষে লেকপারে বসে, বন্ধুদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝালমুড়ি খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে খেলাধুলায় মেতে উঠে জয়-পরাজয়ের আনন্দ উপভোগ করা। লাইব্রেরিতে সকাল, দুপুর কিংবা সন্ধ্যায় কোনো এক চেয়ারে বসে হারিয়ে যেতাম বইয়ের পৃষ্ঠায়।
দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ও রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠার একটি নির্দিষ্ট স্থান। আর এটি হলো ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ লেকপার। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এটি ২০১৭ সালে তৈরি করা হয়।
এখানে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগের শিক্ষার্থীকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা যেতে পারে এই লেকপারকে। ক্লাস শেষ করে বন্ধুরা সব দল বেঁধে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বরের দিকে। অচিরেই জমে ওঠে চায়ের কাপে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। বন্ধুদের সঙ্গে থাকে গিটার তা গলা ফাটিয়ে গান করা নিশ্চিত। নিমেষেই দূর হয়ে যায় সারাদিনের সব ক্লান্তি, সব বিষণ্ণতা। শুধু যে আড্ডা হয় তা কিন্তু নয়, সেখানে জন্মদিনের কেক কাটা থেকে শুরু করে ফটোশুট বিভিন্ন স্পেশাল ডে উদযাপনও হয়।
ছোট ছোট কিছু টুকরা গল্পে বাধা, এলোমেলো কিছু স্মৃতিতে সাজানো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো। আর এসব স্মৃতির পুরোটাই জুড়ে থাকে প্রিয় বন্ধুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আবেগের জায়গা দখল করে রাখে এই প্রিয় বন্ধুরাই। তবে এত বৈচিত্র্য থাকার পরও বন্ধুদের মধ্যে আবেগ ও ভালোবাসার কমতি থাকে না।
কোভিড-১৯ প্রকোপে পুরো পৃথিবীর মতো প্রিয় স্বদেশও আজ বিধ্বস্ত। সেই ধারাবাহিকতায় প্রিয় ক্যাম্পাস আজ কয়েক মাস ধরে বন্ধ। কাশফুলে অপরূপ সাজে বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস এক নতুন রূপ ধারণ করেছে। রঙিন ক্যাম্পাস আজ মলিন, প্রাণহীন। প্রিয় বন্ধুরাও বাসায় অলস সময় পার করছে। কেউ আর আড্ডার আসর জমায় না।
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকত গোটা ক্যাম্পাস। মনের আনন্দে ছবি তোলা। শিক্ষার্থীদের হৈ-হুল্লোড় করে বাস ধরার প্রতিযোগিতাটিও এখন আর চোখে পড়ে না। বইয়ের পৃষ্ঠায় হারিয়ে যেতাম অতীতের উদ্ভট কিছু জানতে আর সাফল্য এনে দেবে, এমন প্রত্যাশা থাকে মনে। কিন্তু এখন তো আর এমন হয় না। আজ সব যেন স্মৃতি। ভার্সিটির প্রতিটি আবাসিক হল, মেস যেন আজ কীটপতঙ্গের আবাসস্থল। ধুলাবালিতে একাকার পড়ার টেবিল আর বিছানা।
নীরবে মুখর পুরো ক্যাম্পাস। হয়তো ভার্সিটির বাসগুলোর সিটের ওপর পড়ে আছে ধুলোবালির স্তূপ আর জমে আছে মরীচিকা। তবুও ফিরে যেতে চায় যে এই মন প্রিয় ক্যাম্পাসে। আর প্রাণ খুলে বলতে চাই- আসবে কবে ফিরে পৃথিবী আগের রূপে।
সবাই মিস করছে প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোকে। ক্যাম্পাসের কতশত স্মৃতির অন্তরালে রয়েছে কত ভালোবাসা তা এখন ভাবাচ্ছে। আজ এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন- কবে খুলবে প্রিয় ক্যাম্পাস, আর কবে ফিরবে বশেমুরবিপ্রবির সেই জয়বাংলা চত্বরে। বাসায় থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। আবার দেখা হবে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে, নতুন এক সময়ের সাথে, নতুন পরিবেশে।
লেখক: শিক্ষার্থী