প্রসঙ্গ এইচএসসি পরীক্ষা
১০ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৫১
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের (এইচএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না, এই সিদ্ধান্ত গত বুধবারই জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের গড় অনুযায়ী এবারের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অর্থাৎ এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা জেএসসি এবং এসএসসি দু’টি পরীক্ষাতেই জিপিএ-ফাইভ পেয়েছিল, এইচএসসিতেও তাদের রেজাল্ট জিপিএ-ফাইভই আসবে।
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম সরব। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলছেন, আবার অনেকেই বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে দাবি করছেন আবার কেউ বা এ সিদ্ধান্তের তুমুল সমালোচনা করছেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে পরীক্ষা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যৌক্তিক। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে নিচে আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরলাম।
প্রথমেই মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দিলেই দেখতে পাবো— আন্তর্জাতিক লেভেলে এবার ও-লেভেলস, এ-লেভেলস-এর ফলাফল কীভাবে হয়েছে।
এ-লেভেলস(A2) এর ফলাফল: ও-লেভেলস এর ফলাফল এবং এ-লেভেলস এর প্রথম পত্র(AS)-এর ফলাফল এবং ক্লাস টেস্টের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গড়ে একটা র্যাংকিং করে ১৩৮ দেশে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করেছে। তবে স্বাভাবিক কারণেই সমালোচনা কিন্তু সেখানেও হয়েছে।
ফলাফল যাই হোক এখন তো সবাই সব জায়গায় ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। তখন কিন্তু আর কোনো সমস্যা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিলেই সমস্যার সুন্দর সমাধান হয়ে যাবে।
বলতে পারেন এত পরীক্ষার্থী কিভাবে নেবে। দুই ধাপে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। প্রথম ধাপে নেগেটিভ মার্কিংসহ একটি এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে অধিকাংশ বাদ দিয়ে বাকিদের রিটেন পরীক্ষা নিলেই জটিলতা এড়ানো যাবে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কেন আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না। আমার ধারণা, আসলে সরকার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে পরীক্ষা নিতে। পরীক্ষা নেওয়ার সব চেষ্টাই সরকারের তরফ থেকে করা হয়েছে। তবে মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তা আশানুরূপ বা সন্তোষজনক না হওয়ায় একেবারে চূড়ান্ত সময় এসে পরীক্ষার ঝুঁকি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি সব বছর ঘটে না। হয়ত শতবছরে একবার আসে। সে সময় বিশ্বের সব নিয়ম-কানুনই পরিবর্তন হয়ে যায়। মানুষের জীবনের মূল্য বিবেচনায় বড় বড় সিদ্ধান্ত আসে। এসব সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টি। এবারও তাই হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে এমন এক কঠোর অথচ সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই নিয়েছে সরকার। শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে বাস্তব অবস্থা চিন্তা করলেই স্পষ্ট বুঝা যাবে যে সরকারের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।