Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্তের রঙে ভালোবাসা দিবস


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৪৪

ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত—কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাটি যেন বসন্তের সূচনা বার্তা। গতকাল ছিল পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন থেকেই বন বনান্তে কাননে কাননে রঙিন কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। এ সময়েই শীতের জীর্ণতা দূরীভূত হয়ে সেজে উঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই পরিবর্তন জানান দেয় নতুন কিছুর। এ যে ঋতুরাজ বসন্ত।

বসন্তের আগমনী বার্তায় এ বছর যোগ হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বাঙালির এ বছর একই দিনে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণের সাক্ষী হয়। ঋতুরাজ বসন্ত বরণের দিনটি নির্ধারণ থাকলেও ভালোবাসার জন্য লাগে না কোনো দিবস। তবে প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের প্রেমকাহিনীকে অবলম্বন করে দিনটি পালন করা হয়। ভালোবাসা শব্দটি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নিকট সীমাবদ্ধ নয়। বরং ভালোবাসা রয়েছে সবার মধ্যে। এটি জগত জুড়ে এক মায়ার বন্ধন। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিক-প্রেমিকা সবাই ভালোবাসার অংশ।

বিজ্ঞাপন

ভালবাসা দিবসটির পেছনেও রয়েছে কিছু ঘটনা, কিছু ইতিহাস। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত। কারো করো মতে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনো যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে ক্ষেপে উঠেছিলেন সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এ দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে। তবে এটিও সর্বজন স্বীকৃত নয়। এখানেও দ্বিমত আছে। কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীদের প্রতি ছিলেন ভীষণ সদয়। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো। একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ (‘From your Valentine’)। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রঙ দেখতে পেয়েছিল, কারণ ইতিমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল।

বিজ্ঞাপন

ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মানুষরা ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য? এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দু গুনের ছোট্ট জবাব, ‘ভালোবাসা একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়, সারাবছর সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেঁছে নিয়েছে’।

বসন্তের আগমনী বার্তা মানুষের মনে এক রঙের ছোঁয়া। প্রকৃতির নতুনত্বের সাথে নিজেকেও নতুনভাবে মেলে ধরতে চায় অনেকে। স্বপ্ন, ইচ্ছাকে নতুনরূপে সাজানোই যেন মনের বাসনা। বসন্তের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পালিত হয়েছে এবার। ১৪ই ফেব্রুয়ারি তাই বসন্তের রঙে ভালোবাসা যেন রঙিন হয়ে উঠে। বাসন্তী রঙে সাজে মানুষের মন। প্রকৃতির সুবাসের ন্যায় ভালোবাসার সুবাসও ছড়িয়ে পড়ে পরতে পরতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর