আইন করে কি মাতৃভাষার প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:২৯
বাংলা ভাষা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যের ভাষা। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ৯৮ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষার বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছরের অধিক পুরনো। গত সহস্রাব্দের সূচনালগ্নে পাল এবং সেন সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা ছিল বাংলা। সুলতানি আমলে অত্র অঞ্চলের অন্যতম রাজভাষা ছিল বাংলা। মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছিল বাংলা ভাষায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতাবিরোধী বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত বাংলা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ হলে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের করেন, সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গণআন্দোলনের মুখে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে ‘বাংলা’ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান যখন প্রণীত হয় তখন সেই সংবিধানের ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে জীবন উৎসর্গকারীদের স্মৃতিকে স্মরণ রাখার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের বিপরীত পাশে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে নির্মিত হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হয় বাংলাকে। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি অফিস-আদালতের দাফতরিক কাজে বাংলা ভাষা প্রচলনে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জারিকৃত এক আদেশে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, স্বাধীনতার তিন বছর পরও অধিকাংশ অফিস আদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালোবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়”।
বর্তমানে মাতৃভাষাভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা।
সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন জারি করে। বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদের বিধানকে পূর্ণরূপে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালে প্রণীত আইন। এই আইন প্রণয়নের পর থেকে জাতীয় সংসদের সকল আইন বাংলা ভাষায় প্রণীত হচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল জবাব ও অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে।
বাংলাদেশের আপামর সকল জনগণকে মাতৃভাষায় সকল রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়ে জনগণের ক্ষমতায়নের পথে ঔপনিবেশিক ভাষাগত বাধা দূর করার প্রয়াসেই আইনটির প্রণয়ন। তবে দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১৯৮৭ সালের ৮ ই মার্চ ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ করা হলেও সুপ্রিম কোর্টে আইনটি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার যথেষ্ট সমালোচনা রয়েছে। প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এই আইনটি নিয়ে বিভিন্ন সভায় আলোচনা ও পত্রপত্রিকায় সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়।
২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিচার কাজে ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের প্রয়োগ বিষয়ে একটি সুপারিশ পেশ করে বাংলাদেশের আইন কমিশন। একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই দুইটি ঘোষণাপত্র জারি এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আইন কমিশন সুপারিশে উল্লেখ করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দের একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ অনুযায়ী অফিস-আদালত, গণমাধ্যমসহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি দূতাবাস ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সাইনবোর্ড, নামফলক ও গাড়ির নম্বর প্লেট, বিলবোর্ড এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখা ও প্রচলনের নির্দেশ দেন। সকলপ্রকার নামফলকে বাংলা ব্যবহার করতে বলেন। আদালতের আদেশের তিন মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে আদেশটি কার্যকর করতে বলে। কিন্তু সে আদেশের বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেটে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলায় লেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “যে ভাষা আমরা সবাই বুঝতে পারি, সেই ভাষায় রায় লেখা উচিত”। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান লিখেছেন, “আইনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রচলনের জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন কেন সরকারি উদ্যোগে করা হয়নি আমি বুঝতে পারি না”। তিনি আরও লিখেছেন, “যদি ন্যায়বিচার সদগুণ হয় এবং জনগণের কল্যাণের জন্যই যদি এর কাজ হয় তবে তা জনগণের ভাষাতেই হওয়া উচিত”।
এসব তো গেল আইনের কথা, এবার আসা যাক মূল কথায়— আইন করে কি ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করা যায়? স্বভাবতই প্রশ্ন আশে, মাতৃভাষার মর্যাদা কেন আইন করে রক্ষা করতে হবে?
যতদিন না আমরা দেশের জনসাধারণ নিজ উদ্যোগে এবং অন্তর থেকে মাতৃভাষাকে ধারণ করব ততদিন পর্যন্ত সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন শুরু হবে বলে মনে হয় না। প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষা ব্যতিরেকে কি স্পষ্ট ভাবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যায়? পরিপূর্ণতা আসে? অবশ্যই না। কেননা যে ভাষায় আপামর জনতা অভ্যস্ত নয় সে ভাষা কখনই সর্বস্তরে বোধগম্য হবে না। পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা কি-না মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছি।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য সমাজে নিজের পাণ্ডিত্য জাহিরের জন্য এই আমরাই আবার প্রতিনিয়ত অবহেলা করছি আমাদের মাতৃভাষাকে। ইদানীং তো ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার হিড়িক পড়েছে।
আসলে এই প্রথা একদম নতুনও নয়। বাংলা ভাষার বিবর্তনের ইতিহাস যা বলে তা দুঃখজনক হলেও সত্য—এই অঞ্চলের প্রাচীনতম ভাষা বাংলা জন্মলগ্ন থেকেই উপেক্ষিত, সমাজের উঁচুশ্রেণী বরাবরই ইংরেজিতে কথা বলতে, সন্তানদের ইংরেজিতে পড়াতে আগ্রহী। বাংলাকে কেন্দ্র করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হলেও বাংলাকে নিচু শ্রেণীর ভাষা হিসেবেই গণ্য করা হত। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাকে অতীতের মতোই এখনও পিছিয়ে পড়া ও মধ্যবিত্তের শিক্ষা বলেই গণ্য করা হয়। সাহেবরা বরাবরই ইংরেজিতে নিজেকে জাহির করতে উৎসুক। এর প্রচলন জাতি হিসেবে আমরা অনেককাল ধরেই বহন করে আসছি।এই অঞ্চলে কেবল ইন্টারনেট ও বিশ্বায়নের যুগে এসে যে আধুনিকতার মানদণ্ড ইংরেজি হয়েছে তা কিন্তু নয়। এই চর্চা বহুকাল ধরে চলে আসছে। শুধু তাই নয়, ইংরেজ জীবনাচরণও যে একালে এ অঞ্চলে প্রকাশ পাচ্ছে তাও কিন্তু নয়, এর চর্চা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে। আমরা খুবই অনুকরণপ্রিয় এক জাতি। এসব কিছু যে জাতি হিসেবে আমাদের দীনতাকেই ইশারা করে তা হয়ত আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।
আমাদের দেশে বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে, বিশ্বায়নের যুগে তা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মানে তো এই নয় যে, চাকরিতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে ইংরেজিতে পারদর্শিতা থাকতে হবে। কোথাও তো শুদ্ধ বাংলা বলা ও লেখার পারদর্শিতাকে যোগ্যতা হিসেবে সংযুক্ত করতে দেখা যায় না। বিদেশি ভাষাকে প্রধান না করে বাংলাকে প্রধান করেও তো বিদেশি ভাষার চর্চা চালানো যায়। অন্যান্য ভাষার প্রসারকে উপেক্ষা করে নয় বরং বাংলাকে সবাই অন্তর থেকে ধারণ করে বাংলাকে প্রধান রেখে অন্যান্য ভাষার চর্চা করা সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ তো সাহিত্য ইংরেজিতে রচনা করেননি, বরং রবী ঠাকুরের বাংলায় রচিত সাহিত্যকেই ইংরেজিতে অনূদিত করা হয়েছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা বাংলাভাষী হিসেবে নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে পারি না। অথচ এই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সালাম, বরকত, রফিক জব্বারদের রক্তদানের নজিরকে সম্মান জানিয়েই ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে ইউনেস্কো।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারার মাধ্যমেই তরান্বিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ। তাইতো স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন সর্বজনীন বাংলা ভাষার চর্চা নিশ্চিত করতে। তিনি জানতেন-বুঝতেন আমাদের স্বাধীনতার পেছনে রাষ্ট্রভাষার অবদান কতটুক ছিল। তিনি নিজেও ছিলেন ভাষা আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথম ভাষণ বাংলায়ই দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ভারতেও জাতির পিতার সফরকালে সবাই বাংলায়ই মুজিবের ভাষণ শুনতে চেয়েছিল। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরই সে প্রয়াস থেমে গেছে।
এখন বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি ভাষার প্রচলন কার্যক্রমের উদ্ভাবনী অনুষ্ঠানে এসে ভারতীয় হাই কমিশনারের দেওয়া বক্তব্যটির চুম্বক অংশ ছিল এমন—“এদেশে হিন্দি ভাষার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, কারণ এখানকার লোকেরা হিন্দি ভালো বুঝে ও বলতে পারে”।
এর কারণও যথেষ্ট সুস্পষ্ট। আমরা ভারতীয় চলচ্চিত্র, নাটক, গান খুবই উপভোগ করি, নিজ দেশেরটা না। অন্য যে কোনো ভাষা শিক্ষাতে দোষ নেই, তবে নিজের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে কেন? নিজের ভাষাকে যথার্থ সম্মান দিয়ে সরকারি, বেসরকারি অফিস, আদালতের সকল কার্যক্রমে বাংলা ভাষাকে প্রধান রেখে কেবল বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে এবং বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলার সময় ভিন্ন ভাষার প্রয়োগই তো যথার্থ।
সর্বোপরি বাংলা নিয়ে গবেষণা হোক, শুদ্ধ বাংলা বলতে ও লিখতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হোক। নাটক, সিনেমায় বিকৃত বাংলার চর্চা বন্ধ করা হোক।সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকেরা সন্তানদের বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষায় শিক্ষা প্রদান করুন, বাংলাকে উপেক্ষা করে নয়। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা নিয়ে আলোচনা আর সারা বছর চুপ না থেকে বছরজুড়ে বাংলা নিয়ে গবেষণা হোক, বাংলা নিয়ে নিয়ে হোক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা। আর ১৯৯৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর শিল্পকলা একাডেমিতে ২০১০ সালে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ চালু হয় পৃথিবীর সব ভাষা সংরক্ষণ, বিভিন্ন ভাষার উপাদান সংরক্ষণ, বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোকে দৃশ্যমান করার লক্ষ্য নিয়ে। এই মহৎ উদ্যোগটি সফল হোক, আলোর মুখ দেখুক, পৃথিবীর সকলেই প্রত্যেকের মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিয়ে গর্ব করুক। আর আমাদের দেশে নিজ ঘর থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলার শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত হোক। আমরা অন্তর থেকে মাতৃভাষাকে ধারণ না করলে আইন করে মাতৃভাষার প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভবপর নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট